সবুজ নীতিতে’ জাহাজ ভাঙা শিল্প: সংকট ও সম্ভাবনার দ্বন্দ্বে উপমহাদেশ
📌 ২০২৫ সালের ২৬ জুন থেকে কার্যকর হচ্ছে হংকং আন্তর্জাতিক কনভেনশন
📌 নতুন মানদণ্ডে টিকে থাকতে হবে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের জাহাজ ভাঙা শিল্পকে
📌 পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ জরুরি, নচেৎ হারাতে পারে বৈশ্বিক বাজার
কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম থেকে
চলতি বছরেই আন্তর্জাতিক জাহাজ ভাঙা শিল্প এক নতুন বাঁকে পৌঁছাতে যাচ্ছে। পরিবেশ ও শ্রম-সুরক্ষায় যুগান্তকারী এক রূপান্তর ঘটাবে হংকং আন্তর্জাতিক কনভেনশন ফর দ্য সেফ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টালি সাউন্ড রিসাইক্লিং অব শিপস। আগামী ২৬ জুন থেকে কার্যকর হচ্ছে। এই চুক্তির আওতায় বিশ্বের প্রতিটি বড় জাহাজ পুনর্ব্যবহার ইয়ার্ডকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
এই ঐতিহাসিক রূপরেখা অনুযায়ী, প্রত্যেক জাহাজে থাকতে হবে ‘Inventory of Hazardous Materials (IHM)’, বিপজ্জনক পদার্থের তালিকা থাকবে। জাহাজ ভাঙার সময় পরিবেশ ও মানবশ্রমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে আধুনিক প্রযুক্তি ও কাঠামো দিয়ে।
উপমহাদেশীয় চাপ: টিকতে হলে বদলাতে হবে: বিশ্বের মোট জাহাজ পুনর্ব্যবহারের প্রায় ৭০% হয়ে থাকে দক্ষিণ এশিয়ার উপকূলীয় তিনটি দেশ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে। বিশেষ করে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, ভারতের আলাং এবং পাকিস্তানের গাদানি অঞ্চল-এই তিন হাবের ওপর নির্ভর করে পুরো শিল্প।
কিন্তু এই অঞ্চলের অধিকাংশ শিপব্রেকিং ইয়ার্ড এখনো আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে অপ্রস্তুত। বাংলাদেশে মাত্র ১০-১২টি শিপইয়ার্ড আছে যেগুলো ‘গ্রিন রিসাইক্লিং’ নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ভারতের আলাং কিছুটা এগিয়ে থাকলেও এখনও পুরোপুরি হংকং কনভেনশনের উপযোগী হয়ে ওঠেনি অধিকাংশ ইয়ার্ড।
সীতাকুণ্ডের এক শিপব্রেকিং ইয়ার্ড মালিক জানালেন, “নতুন পরিবেশ আইন অনুযায়ী আমাদের কারখানায় আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এটি ব্যয়বহুল। ছোট ও মাঝারি মালিকরা এই খরচ সামলাতে পারবেন না। ফলে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হবেন।”তার মতে, সরকারি সহায়তা ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ছাড়া এই খাত টিকিয়ে রাখা কঠিন।
গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র মেরিটাইম অ্যাডভোকেট লিয়াম হেন্ডারসন বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ায় শিপ ব্রেকিং কার্যক্রম এখনও অনেকাংশে খোলা আকাশের নিচে, শ্রমিক নিরাপত্তাহীন এবং পরিবেশে ভয়াবহ দূষণ সৃষ্টি করে। হংকং কনভেনশন এসব অনিয়ম বন্ধে যুগান্তকারী পদক্ষেপ।”
“ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ ইউরোপ” সংগঠনের পরিচালক এলেনা গ্রানডি বলেন, “শিপ রিসাইক্লিং শিল্পকে টেকসই করতে হলে শুধু নিয়ম নয়, কার্যকর মনিটরিং ও সঠিক প্রযুক্তির প্রয়োগ জরুরি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উচিত এখনই রূপান্তর শুরু করা।”