এভিয়েশন ডেস্ক:
সৌদি আরব আগামী পাঁচ বছরে নিজেকে একটি বৈশ্বিক বিমান চলাচল কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য অর্জনে দেশটি বিমান খাতকে পরিণত করছে একটি কৌশলগত চালিকাশক্তিতে। বিশ্লেষকদের মতে, ডিজিটাল প্রযুক্তির বিস্তার, বিমান সংযোগ বৃদ্ধির উদ্যোগ এবং অবকাঠামোগত রূপান্তর মিলিয়ে সৌদি আকাশপথে ঘটছে এক নীরব বিপ্লব।
২০২৪ সালেই দেশটি অভূতপূর্ব সাফল্যের সাক্ষী হয়েছে। এই বছর ৯৪ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহন করেছে সৌদি আরব। এটা আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনায় এসেছে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি এবং বিমানপথে মালামাল পরিবহনে রেকর্ড ৫২ শতাংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে ১০ লাখ টন ছুঁয়েছে মোট কার্গো।
রাজত্বের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ৩৩০ মিলিয়ন যাত্রী এবং ৪৫ লাখ টন কার্গো পরিবহন। চলমান উন্নয়ন সেই লক্ষ্য পূরণের পথে কার্যত এগিয়ে চলেছে।
আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা (আইএটিএ)-এর মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামিল আল-আওয়াধি বলেন, “সৌদি আরব ডিজিটালাইজেশন ও সংযুক্তির যে রূপান্তর ঘটাচ্ছে, তা আগামী পাঁচ বছরে দেশটিকে বৈশ্বিক বিমান হাবে পরিণত করবে। এর প্রভাব শুধু বিমান চলাচলে নয়, দেশের অর্থনীতি ও সমাজে দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।”
তিনি আরও জানান, জেনারেল অথরিটি অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (জিএসিএ)-এর ফি কাঠামো সংস্কার এবং স্বাধীন নিয়ন্ত্রক কাঠামো গঠন সৌদি বিমানবন্দরগুলিকে আঞ্চলিকভাবে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলেছে, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্যও একটি রোল মডেল হয়ে উঠছে।
রিয়াদ এয়ার: সৌদি অ্যাভিয়েশনের নতুন যুগের সূচনা
সৌদি আকাশপথের রূপান্তরে সবচেয়ে বহুল প্রতীক্ষিত সংযোজন হতে যাচ্ছে ‘রিয়াদ এয়ার’ দেশটির নতুন পূর্ণসেবা জাতীয় পতাকাবাহী বিমান সংস্থা, আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে ২০২৫ সালে।
বিশ্বখ্যাত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘আর্থার ডি. লিটল’-এর ইনোভেশন বিভাগের প্রধান মার্ক বোথর্ন বলেন, “রিয়াদ এয়ার চালু হওয়া সৌদি অ্যাভিয়েশন খাতের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এটি এমন এক পরিবর্তন বয়ে আনবে, যা দশকে একবার ঘটে।”
তার মতে, এই এয়ারলাইন শুধু সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ বিমান সংযোগকে আরও বিস্তৃত করবে না, বরং রিয়াদকে আন্তর্জাতিক বিমান যোগাযোগের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলবে। বিশ্ব সৌদি আরবকে কীভাবে দেখবে, তার একটি বড় অংশ নির্ধারিত হবে ‘রিয়াধ এয়ার’-এর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে।
সৌদি সরকার নতুন এই এয়ারলাইনকে একটি প্রতীক হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। যেখানে আধুনিক প্রযুক্তি, আতিথেয়তা ও পরিবেশগত টেকসইতার সংমিশ্রণে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা হবে একটি নতুন সৌদি পরিচয়।
বিমান চলাচলের অবকাঠামো উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব এবং পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনার সমন্বয়ে সৌদি আরব এখন আকাশপথে তার নতুন ইতিহাস রচনা করছে। একটি এমন ভবিষ্যতের পথে, যেখানে রাজত্ব শুধু আকাশেই নয়, বিশ্বব্যবস্থার কেন্দ্রে জায়গা করে নিচ্ছে।