Home আইন-আদালত বাংলাদেশের কারাগার থেকে দার্জিলিংয়ের পথে: এক প্রত্যার্পণের গল্প

বাংলাদেশের কারাগার থেকে দার্জিলিংয়ের পথে: এক প্রত্যার্পণের গল্প

সংগৃহীত ছবি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাজশাহী: মাত্র ১৫ দিনের কারাদণ্ড হয়েছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের যুবক সালাইন হোসেনের। অথচ আইনি প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতায় বাংলাদেশেই কাটিয়ে দিতে হয়েছে প্রায় ছয় মাস। শেষ পর্যন্ত সাংবাদিক শামসুল হুদার উদ্যোগে স্বদেশে ফিরেছেন এই যুবক, যার পেছনের গল্প এখন আলোচনায়।

রাজশাহীর রাজপাড়া থানায় ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই আত্মসমর্পণ করেন সালাইন হোসেন। পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের বাসিন্দা সালাইন বেঙ্গালুরুতে কাজের সন্ধানে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে মালদা হয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। ঢাকায় এক রেস্তোরাঁয় কিছুদিন কাজও করেন তিনি। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতির টানাপোড়েনে উদ্বিগ্ন হয়ে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। পথে সীমান্তে আটকে গিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেই পুলিশের শরণাপন্ন হন।

আদালত চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি সালাইনকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন। কিন্তু তার আগেই তিনি হাজতবাস করে ফেলেছিলেন প্রায় পাঁচ মাস। ১৪ ডিসেম্বরই কার্যত তার সাজা শেষ হয়ে যায়। তারপরও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি শুধু কাগজপত্রের ঘাটতির কারণে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতীয় হাইকমিশনের ছাড়পত্র না মেলায় সালাইন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক থাকেন আরও চার মাসের বেশি সময়।

এই জটিলতার সমাধানে এগিয়ে আসেন সাংবাদিক শামসুল হুদা। ‘বাংলাদেশের বজরঙ্গি ভাইজান’ নামে পরিচিত এই মানবিক কর্মী এর আগেও একাধিক বিদেশিকে দেশে ফেরত পাঠাতে ভূমিকা রেখেছেন। ২২ ফেব্রুয়ারি সালাইন সম্পর্কে অবগত হওয়ার পর থেকেই তিনি নিজ উদ্যোগে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক শাখায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। সবশেষে ২১ এপ্রিল অনুমোদন আসে। এরপর দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে শামসুল হুদা নিজেই রাজশাহীতে গিয়ে প্রত্যার্পণ কার্যক্রম সম্পন্ন করেন।

রোববার, ১১ মে, অবশেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের মালদা সীমান্তে সালাইনকে হস্তান্তর করা হয়। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফের উপস্থিতিতে কারা কর্তৃপক্ষ ও ইমিগ্রেশন পুলিশ এই হস্তান্তরের কাজ শেষ করেন। ভারতের পক্ষে সালাইনকে গ্রহণ করেন তার বড় ভাই ফয়সাল হোসেন।

রাজশাহী কারাগার সূত্র বলছে, শুধুমাত্র অনুমোদনের অপেক্ষায় এ ধরনের দীর্ঘদিন আটক রাখার ঘটনা বিরল নয়। কিন্তু সালাইনের মতো নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষদের পক্ষে আইনি সহায়তা পাওয়াও কঠিন। এমন বাস্তবতায় শামসুল হুদার মতো ব্যক্তি উদ্যোগ বড় দৃষ্টান্ত হয়ে উঠছে।

এই ঘটনাটি আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আন্তর্জাতিক প্রত্যার্পণ প্রক্রিয়ায় কতটা ধীরগতির বাস্তবতা রয়েছে। একই সঙ্গে এটি প্রমাণ করে, ব্যক্তিগত মানবিক উদ্যোগ কখনো কখনো রাষ্ট্রীয় কাঠামোরও ঘাটতি পূরণ করতে পারে।