Home স্বাস্থ্য স্বাস্থ্যকর ব্রেড কিনছেন তো, না কি মোড়কের ফাঁদে পড়ছেন?

স্বাস্থ্যকর ব্রেড কিনছেন তো, না কি মোড়কের ফাঁদে পড়ছেন?

হেলথ ডেস্ক:


মাত্র তিনটি উপাদান ময়দা, পানি ও লবণ এই সহজ সমন্বয়েই তৈরি হওয়া উচিত একটি স্বাস্থ্যকর পাউরুটি। কিন্তু যুক্তরাজ্যে একজন মানুষ প্রতি বছর গড়ে যে ৬০টি পাউরুটি কেনেন, তার বেশিরভাগই ভিন্ন এক রাসায়নিক রূপে হাজির হয় ইমালসিফায়ার, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড ও অন্যান্য প্রক্রিয়াজাত উপাদানে ঠাসা। গবেষণা বলছে, এই উপাদানগুলো অন্ত্রে উপকারী জীবাণুদের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

ফলে মানুষ ঝুঁকছে দামী বিকল্প সারডো, হোলমিল বা রাই ব্রেডের দিকে। কিন্তু এই ‘প্রিমিয়াম ব্রেড’গুলো কি সত্যিই স্বাস্থ্যসম্মত? উত্তরটা এক কথায় ‘না’ হতে পারে। ২০২২ সালে রিয়েল ব্রেড ক্যাম্পেইনের এক অনুসন্ধান দেখিয়েছে, কিছু তথাকথিত ‘হোলমিল’ রুটিতে ছিল ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পরিশোধিত ময়দা। এমনকি সম্প্রতি ওকাডো তাদের এক ‘হোলমিল’ রুটির নাম পরিবর্তন করে ‘ব্রাউন ব্রেড’ করেছে, কারণ তা আসলে পুরোপুরি হোলমিল ছিল না।

রিয়েল ব্রেড ক্যাম্পেইনের সমন্বয়ক ক্রিস ইয়াং বলেন, “হোলগ্রেইন’, ‘সারডো’, ‘এনসিয়েন্ট গ্রেইনস’ বা ‘ফ্রেশলি বেকড’—এসব শব্দ বাজারজাতকরণের মোড়ক মাত্র, যাদের জন্য নির্দিষ্ট আইনি সংজ্ঞা নেই।” তিনি আরও বলেন, প্যাকেটের সামনের যত জোরালো দাবি, পেছনের লেবেল তত পড়ে দেখা দরকার।

কীভাবে বুঝবেন আপনার ব্রেড আসল কিনা?
যুক্তরাজ্যের আইন অনুযায়ী, কোনো রুটি ‘হোলমিল’ নামে বিক্রি হলে তার সমস্ত ময়দা হোলমিল হতে হবে। কিন্তু তাতে সোয়া ফ্লাওয়ার বা রিফাইন্ড গ্লুটেন মিশিয়ে পুষ্টিগুণ কমানো যায়। অনেক সময় ব্রেডের রং গাঢ় করতে ক্যারামেলাইজড চিনি বা মলাসেস মেশানো হয়, যা ক্রেতাদের বিভ্রান্ত করে।

সঠিক হোলমিল পাউরুটি চেনার সহজ উপায়—উপাদান যত কম, তত ভালো। এবং এটি এখনো সাদা পাউরুটির তুলনায় অধিকতর স্বাস্থ্যকর, কারণ এতে তিনটি প্রধান অংশ থাকে: ব্রান (ফাইবারযুক্ত বাইরের স্তর), এন্ডোস্পার্ম (স্টার্চভিত্তিক মাঝের অংশ) এবং জার্ম (পুষ্টিগুণে ভরা কেন্দ্র)। সাদা পাউরুটিতে থাকে শুধু এন্ডোস্পার্ম।

সারডো না ‘সারফো’?
সারডো একটি প্রক্রিয়া, কোনো রুটি নয়। এতে ‘স্টার্টার’ ব্যবহার করা হয়—যা কয়েকদিন ধরে গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় এবং প্রাকৃতিকভাবে রুটিকে ফুলিয়ে তোলে। কিন্তু বর্তমানে অনেক প্যাকেটজাত রুটিতে ‘সারডো’ লেখা থাকলেও আসলে তাতে বেকার’স ইস্ট বা রাসায়নিক রাইজিং এজেন্ট থাকে, যেগুলো সত্যিকারের সারডোর মতো উপকার করে না।

ক্রিস ইয়াং বলেন, যদি উপাদান তালিকায় বেকার’স ইস্ট বা ই-নাম্বার যুক্ত কিছু দেখা যায়, তাহলে বুঝবেন এটা ‘সারফো’ অর্থাৎ ছদ্ম সারডো। নিবেদিতভাবে তৈরি আসল সারডোতে থাকবে শুধু হোলগ্রেইন ময়দা, পানি, লবণ এবং স্টার্টার।

রাই ব্রেড: নাম আছে, গুণ কতটুকু?
রাই ব্রেডকে অনেকেই স্বাস্থ্যকর বলেন যথার্থভাবে তৈরি হলে তা সত্যি। এতে সাধারণত থাকে হোল রাই ফ্লাওয়ার, পানি, লবণ ও ইস্ট। ফাইবারের পরিমাণ প্রচুর ৪০ গ্রাম রুটিতে ৫ থেকে ৭ গ্রাম ফাইবার পর্যন্ত থাকে। এটি রক্তে চিনি ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে, ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে সহায়তা করে।

তবে যুক্তরাজ্যে রাই ব্রেডের কোনো নির্ধারিত মানদণ্ড নেই। ফলে সামান্য রাই ফ্লাওয়ার দিলেই যেকোনো রুটিকে ‘রাই ব্রেড’ বলা যায়। ক্রিস ইয়াং পরামর্শ দেন, ৫১ শতাংশের বেশি রাই ফ্লাওয়ার আছে এমন রুটি বেছে নিতে।

শেষ কথা
বাজারে স্বাস্থ্যকর ব্রেডের মোড়কে অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে। তাই ‘সাদা নয়, হোলমিল’, ‘সারডো লিখলেই সারডো নয়’ এবং ‘রাই মানেই স্বাস্থ্য নয়’—এই তিনটি কথাই মনে রাখা জরুরি। একটাই মূলনীতি—উপাদান যত কম, উপকার তত বেশি।

– সংগৃহীত : টেলিগ্রাফ ইউকে থেকে