Home শেয়ারবাজার ওয়ারেন বাফেটের বিদায় : ছয় দশকের বিনিয়োগের এক নীরব উপাখ্যান

ওয়ারেন বাফেটের বিদায় : ছয় দশকের বিনিয়োগের এক নীরব উপাখ্যান

ওয়ারেন বাফেট। ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:

গত শনিবার নীরবে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ওয়ারেন বাফেট। আশ্চর্য হবার কিছু ছিল না তিনি যে বিদায় নিচ্ছেন ৯৫ বছর বয়সে, এ এক প্রাকৃতিক সময়। তবুও, এটি ছিল এক ধরনের ধাক্কা। অনেকটা বব ডিলানের মতো, তিনি যেন চিরকাল ছিলেন আমাদের সঙ্গে। ১৯৬৫ সালে তিনি ম্যাসাচুসেটসের এক জীর্ণ টেক্সটাইল মিলের দায়িত্ব নেন।

তার দীর্ঘ যাত্রার পরিসংখ্যানটি বিস্ময়কর। ১৯৬৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতি শেয়ারের মূল্য বেড়েছে ৫৫ লক্ষ গুণের বেশি। বিশেষ করে বছরে গড়ে ১৯.৯ শতাংশ হারে। তুলনামূলকভাবে, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক এই সময়ে বেড়েছে মাত্র ৩৯ হাজার গুণ। অর্থাৎ, বাফেট দিয়েছেন শেয়ারবাজারের গড় সাফল্যের চেয়ে ১৪০ গুণ বেশি লাভ।

তবে এই অর্জনই তার আসল উত্তরাধিকার নয়। যা আরও গভীর, তা হলো কীভাবে তিনি এই পথ হেঁটেছেন। সততা, প্রজ্ঞা ও বিনয় নিয়ে। সম্প্রতি ওমাহা শহরে তার বিদায়ী শেয়ারহোল্ডার সভায় তিনি বলেছিলেন, “দয়ালু হলে পৃথিবীটা ভালো হয়। আমি ধনী হলেই যে পৃথিবী ভালো হবে, তা তো নয়।”

তিনি এখনো থাকেন সেই একই বাড়িতে, যা কিনেছিলেন ১৯৫৮ সালে। নিজ বেতনের সীমা রেখেছেন বছরে এক লাখ ডলার। কখনোই শেয়ার অপশন নেননি। কারণ এতে অন্যান্য মালিকদের অংশীদারিত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতো। অথচ, তার সম্পদের পরিমাণ আজ প্রায় ১৬০ বিলিয়ন ডলার।

তার সাফল্যের রহস্য অনেক, কিন্তু একটি সহজ অথচ গভীর বিষয় হলো তিনি দীর্ঘ সময় ধরে অটল ছিলেন। সুদে-সুদের প্রভাব সময়ের সঙ্গে যে কী বিস্ময় সৃষ্টি করে, তা আমরা তার কাজেই দেখেছি। কিন্তু এর জন্য দরকার ধৈর্য ও নীতির প্রতি দৃঢ়তা। বাফেটের মূল শিক্ষা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য হলো দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গির গুরুত্ব। আমেরিকান এক্সপ্রেস কিংবা কোকাকোলার মতো শেয়ারে তিনি বিনিয়োগ ধরে রেখেছেন কয়েক দশক ধরে।

তিনি আবার অপেক্ষা করতেও জানেন। বার্কশায়ার বর্তমানে প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলার নগদ অর্থ ধরে রেখেছে। তিনি কখনোই তাড়াহুড়া করেন না; তিনি খোঁজেন সেই “মোটা বলটা” যেখানে ঝুঁকি ও লাভের অনুপাত সবচেয়ে অনুকূলে।

বাফেট এমন একজন মানুষ, যিনি প্রমাণ করেছেন যদি আপনি এমন কিছু করেন যা আপনি ভালোবাসেন, তাহলে প্রতিদিনই আনন্দের কাজ। এবং তিনি এটিই করে গেছেন। তিনি নিজেকে ঘিরে রেখেছিলেন সৎ ও দক্ষ মানুষ দিয়ে। চার্লি মাংগার ছিলেন তার বন্ধু ও সহযোগী যিনি তার চিন্তাধারাকে আরও সূক্ষ্ম করে তুলেছিলেন। আর বাকিদের দায়িত্ব দিয়ে নিজে পেছনে থেকেছেন।

তার জ্ঞানের ভাণ্ডার এতটাই বিশাল যে, একটি ছোট প্রতিবেদনে তা ধরা যায় না। তার ৬০ বছরের শেয়ারহোল্ডার চিঠিগুলো সেখানেই পথ দেখায়। তবু তিনটি শিক্ষা সামনে আনা যাক:

প্রথমত, কখন প্রবাহের বিপরীতে সাঁতার কাটা দরকার, আর কখন স্রোতে ভেসে চলা ভালো তা বুঝতে জানতে হয়। তিনি ইন্টারনেট বুদবুদের সময় সরে দাঁড়িয়েছিলেন, আবার ২০১৬ সালে অ্যাপলের শেয়ার কিনে তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন প্রযুক্তি নয়মানুষের চাহিদার গভীরতা বোঝাটাই আসল ব্যাপার।

এইভাবেই, এক বিনিয়োগ পুরুষ ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছেন এক প্রজন্মের দার্শনিক, আর আমাদের শিখিয়ে গেছেন ধন-সম্পদ নয়, নীতির চিরস্থায়ী জোরেই আসল উত্তরাধিকার গড়ে ওঠে।