বিনোদন ডেস্ক:
২০১৬ সালের অক্টোবর। মধ্যরাতের প্যারিস যেন থমকে গিয়েছিল ভয় আর আতঙ্কে। ফ্যাশনウইকের জন্য প্যারিসে অবস্থান করা আমেরিকান রিয়েলিটি টিভি তারকা কিম কার্দাশিয়ান হঠাৎই মুখোমুখি হন জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার। হোটেল কক্ষের দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ে একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতী। বন্দুক তাক করে মুখ বেঁধে ফেলে তাকে। তার কথায়, “আমি নিশ্চিত ছিলাম তারা আমাকে ধর্ষণ করবে। মনে হয়েছিল, আমার জীবন সেখানেই শেষ হয়ে যাবে।”
ডাকাতির ওই ঘটনাটি ছিল গত দুই দশকে ফ্রান্সে কোনো ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে সংঘটিত সবচেয়ে বড় ডাকাতি। কিমের থেকে সেদিন দুষ্কৃতীরা ছিনিয়ে নেয় প্রায় ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের অলঙ্কার—যার মধ্যে ছিল তার প্রাক্তন স্বামী ক্যানিয়ে ওয়েস্টের উপহার দেওয়া তিন দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ইউরোর হীরার আংটিও।
ডাকাতির রাতে কিমের পরনে ছিল শুধুই একটি বাথরোব। পুলিশ ছদ্মবেশে হোটেলে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। প্রথমেই হোটেলের কনসিয়র্জকে হুমকি দিয়ে কিমের কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ঢুকে কিমকে হাতকড়া পরানো হয় এবং মুখে টেপ লাগিয়ে তাকে ফেলে রাখা হয় মেঝেতে। একজন দুষ্কৃতী তাকে বাথটাবের দিকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে চাইলে কিম ভাবেন, তিনি হয়তো কোনো জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছেন।
কিম বলেন, তিনি তখনই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা শুরু করেন, পরিবারকে যেন আর একবার দেখতে পারেন। কারণ, তার মনে হচ্ছিল, আর কখনোই হয়তো তিনি আমেরিকায় ফিরতে পারবেন না।
প্রায় এক দশক পর, সেই বহুল আলোচিত ডাকাতির বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে প্যারিসে। আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন কিম কার্দাশিয়ান নিজেই। এই মামলায় অভিযুক্ত ১০ জন, যাদের অধিকাংশই ষাটোর্ধ্ব এবং অতীতে অপরাধমূলক ইতিহাস রয়েছে। তারা ‘গ্র্যান্ডপা রবার্স’ নামে পরিচিত।
অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম ইয়ুনিস আব্বাস পরে একটি বইও লিখেছেন সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার ওপর ভিত্তি করে।
ডাকাতির পর থেকে কিম তার জীবনধারায় বড় পরিবর্তন আনেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার উপস্থিতি হয়ে ওঠে অনেক সংযত। নিরাপত্তার বিষয়েও তিনি আরও সচেতন হন। ভাড়া নেন সাবেক সিআইএ ও সিক্রেট সার্ভিস সদস্যদের। বন্ধ করেন রিয়েল-টাইমে নিজের অবস্থান জানান দেওয়া এবং মূল্যবান অলঙ্কারের প্রদর্শন।
এই ঘটনার প্রভাব পড়ে তার পরিবার ও ফ্যাশন জগতে। বোন কেনডাল জেনার, মডেল গিগি হাদিদসহ অনেক তারকাই তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেন এবং অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হয়ে ওঠেন।
ডাকাতির বিচার চলবে ২৩ মে পর্যন্ত।










