আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বিশ্বের তৃতীয় ‘সুখী শহর’-এর স্বীকৃতি পেল সিঙ্গাপুর। ২০২৫ সালের জন্য ইনস্টিটিউট ফর দ্য কোয়ালিটি অব লাইফ প্রকাশিত হ্যাপি সিটি ইনডেক্স-এ এশিয়ার শহরগুলোর মধ্যে এটি সর্বোচ্চ স্থান অর্জন করেছে। শীর্ষে রয়েছে কোপেনহেগেন (ডেনমার্ক) এবং দ্বিতীয় স্থানে জুরিখ (সুইজারল্যান্ড)।
সিঙ্গাপুর ছাড়াও এশিয়ার মধ্যে শীর্ষ দশে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল (৬ষ্ঠ) এবং তাইওয়ানের তাইপে (৮ম)।
এই সূচকটি ৬টি মূল থিম-এর উপর ভিত্তি করে ৮২টি মানদণ্ড বিশ্লেষণ করেছে নাগরিক জীবন, প্রশাসন, পরিবেশ, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য এবং পরিবহন। মোট ৯৭৯ পয়েন্ট অর্জন করে সিঙ্গাপুর একটি “গ্লোবাল বীকন” হিসেবে উঠে এসেছে।
শিক্ষা ও উদ্ভাবনের ভিত্তিতে সাফল্য:
রিপোর্টে বলা হয়েছে, শিক্ষা এবং উদ্ভাবন সিঙ্গাপুরের সফলতার মূল চালিকাশক্তি। দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশ্বের শীর্ষ ৫০-এর মধ্যে রয়েছে। প্রতি ১০ হাজার বাসিন্দার বিপরীতে ৭.৩৭টি পেটেন্ট নিবন্ধিত হয়, যা গবেষণা ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে অগ্রগতির ইঙ্গিত দেয়।
প্রশাসন ও ডিজিটাল নাগরিক সেবা:
সুশাসন ও স্বচ্ছতা সিঙ্গাপুরের প্রশাসনিক কাঠামোর মূল ভিত্তি। নাগরিক অংশগ্রহণের হারও উঁচু। দেশটি ৮,০৮৬টি উন্মুক্ত ডেটাসেট জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করেছে, যা প্রশাসনিক স্বচ্ছতার পরিচায়ক। অনলাইন পেমেন্ট, অভিযোগ দাখিল ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণে ই-সেবা রয়েছে প্রতিদিনের জীবনের অংশ হিসেবে।
স্বাস্থ্যসেবা ও মানসিক স্বাস্থ্য:
স্বাস্থ্য সূচকে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং কর্মজীবন-ব্যক্তিজীবনের ভারসাম্য। সিঙ্গাপুরে প্রতি ১,০০০ জনে ২.৮ জন চিকিৎসক রয়েছেন এবং জনগণের জন্য রয়েছে সার্বজনীন স্বাস্থ্য বীমা। গড় আয়ু ৮৩ বছর, এবং স্থূলতার হার অত্যন্ত কম। মানসিক স্বাস্থ্যসেবাও সম্প্রসারিত হচ্ছে বয়স্কদের মধ্যে ১৫ শতাংশ সুনির্বাচিত সহায়তা পাচ্ছেন।
নিরাপত্তা ও পরিবহন:
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিঙ্গাপুরের শহর পরিকল্পনা ও নিরাপত্তা বিশ্বের অন্যতম উন্নত। প্রতি ১০,০০০ জনে মাত্র ০.২৪টি দুর্ঘটনা-সংক্রান্ত মৃত্যু ঘটে। শহরের সকল গণপরিবহন চলাচলের উপযোগী প্রতিবন্ধী নাগরিকদের জন্যও। স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা শহরের গতি ধরে রাখতে সহায়তা করে।
পরিবেশ ও টেকসই নগরনীতি:
পরিবেশবান্ধব নীতিতে সিঙ্গাপুর একটি পথিকৃৎ। দেশটির শতভাগ জনগণ পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধার আওতায় রয়েছে। যদিও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখনও একটি চ্যালেঞ্জ, তবুও পুনর্ব্যবহারে অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বায়োডাইভার্সিটি সংরক্ষণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগও শহরটির অগ্রাধিকার।
সার্বিক মূল্যায়ন:
সিঙ্গাপুরের বৈশ্বিক সংযুক্তি, প্রযুক্তি-নির্ভর নাগরিক জীবন এবং পরিকল্পিত নগরব্যবস্থাকে ভিত্তি করে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ৬৩ শতাংশের বেশি মানুষ কমপক্ষে একটি বিদেশি ভাষায় পারদর্শী এবং ৫৫ শতাংশের বেশি নাগরিকের রয়েছে ডিজিটাল দক্ষতা।
এই ফলাফল প্রমাণ করে, নাগরিকের সামগ্রিক কল্যাণে রাষ্ট্র যদি সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় এগিয়ে যায়, তাহলে ‘সুখী শহর’ হওয়া সম্ভব।