Home কলকাতা রণাঙ্গন ও রূপচর্চা: দুই বোনে এক সংগ্রামের কাহিনি

রণাঙ্গন ও রূপচর্চা: দুই বোনে এক সংগ্রামের কাহিনি

যমজ বোন: ড. শায়না-কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানের সংবাদ সম্মেলনে সাহসিক ও শৃঙ্খলার এক প্রতীক হয়ে ওঠেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। প্রেস ব্রিফিংয়ের সেই দৃশ্য অনেক ভারতীয়ের হৃদয়ে নাড়া দেয়। কিন্তু সেই মুহূর্তে কর্নেল কুরেশির পরিবারে ছিলেন আরেকজন, যিনি সেই গর্বের সঙ্গী, যিনি নিজেও বহু পরিচয়ে উজ্জ্বল, তিনি কর্নেল সোফিয়ার যমজ বোন ড. শায়না সুনসারা।

গুজরাটের ভাদোদারার একটি সেনাপরিবারে জন্ম নেওয়া দুই বোনের জীবন যেন দুইটি আলাদা অথচ পরিপূরক যাত্রাপথ। কর্নেল সোফিয়া যখন সামরিক শৃঙ্খলার প্রতীক, তখন শায়না সমাজ ও পরিবেশ রক্ষায় অদম্য কর্মী।

বিজনেসটুডে২৪.কম-এর পক্ষ থেকে নেওয়া এক ফোন সাক্ষাৎকারে ড. শায়না বলেন, “সোফিয়া যেদিন ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর অংশ হিসেবে প্রেসের সামনে আসবে, সেটা আমরা আগেই জানতাম। আমি জানতাম, পুরো ভারত গর্ব করবে, আর আমরা কাঁপা গলায় চোখে জল নিয়ে টেলিভিশনের সামনে দাঁড়াব।”

শায়না নিজে একজন অর্থনীতির গবেষক, সেনা ক্যাডেট হিসেবেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, পাশাপাশি রাইফেল শুটিংয়ে স্বর্ণপদক জয় করেছেন। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমাদের শৈশব থেকেই বাবা-মা আমাদের শিখিয়েছেন, শৃঙ্খলা আর নিষ্ঠা ছাড়া কোনো কিছু অর্জন করা যায় না। তাই আমরা দুই বোনই দুই ভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে গেছি, কিন্তু মূল মানসিক কাঠামো এক।”

২০০৮ সালে ফ্যাশন দুনিয়ায় প্রবেশের পর থেকেই শায়না আলোচনায় আসেন। ২০১৭ সালে ‘মিস ইন্ডিয়া আর্থ’ খেতাব জয়, এরপর আন্তর্জাতিক মঞ্চে ‘মিস ইউনাইটেড নেশন্স ২০১৮’ বিজয়, ও সেই বছরই ফ্যাশনে অবদানের জন্য দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার অর্জন সব মিলিয়ে তার নাম উঠে আসে এক অনন্য উচ্চতায়। তবে খ্যাতির মোহ নয়, তাকে তাড়িত করে দায়িত্ববোধ। গুজরাটে এক লাখ গাছ রোপণের উদ্যোগ তারই প্রমাণ।

তিনি বলেন, “পরিবেশ রক্ষা আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আমি মনে করি, সাজগোজ নয়, প্রকৃতি ও সমাজের সেবা করাই একজন নারীর আসল সৌন্দর্য।”

বোন সোফিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে শায়নার চোখে জল জমে আসে। তিনি বলেন, “সোফিয়া সবসময় নিঃশব্দে কাজ করে গেছে। আজ তার কৃতিত্বের খবর যখন দেশবাসী জানছে, তখন আমার হৃদয় আনন্দে পূর্ণ, আবার ব্যথিতও—এই চিন্তা করে যে, যুদ্ধের ছায়া কখনও যেন তাকে না স্পর্শ করে।”

এই দুই বোনের জীবন কেবল কৃতিত্বের তালিকা নয়, বরং একটি আদর্শ ভারতীয় নারীর প্রতিচ্ছবি। একজন রণক্ষেত্রে, আরেকজন সমাজক্ষেত্রে। তাদের যমজ পরিচয় যেন এক দেশপ্রেম, এক সততা, এক আত্মত্যাগের প্রতীক।