Home Second Lead হজের শুরু কোথা থেকে: ইতিহাসের পাতায় পবিত্র আহ্বান

হজের শুরু কোথা থেকে: ইতিহাসের পাতায় পবিত্র আহ্বান

ছবি সংর্গহীত

ধারাবাহিক প্রতিবেদন: পবিত্র আহ্বানের পথে  পর্ব ১:

মওলানা মোহাম্মদ কাউসার: বিশ্ব মুসলিমের হৃদয়ের গভীরে যে পবিত্র আহ্বানটি চিরকাল অনুরণিত হয়, তা হলো হজ। এটি কেবল একটি ইবাদাত নয়, এটি একটি আত্মিক বিপ্লব, জীবনের আমূল পরিবর্তনের শপথ, যেখানে ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, সব জাতির মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক।’

হজের সূচনা ও প্রাচীন ইতিহাস:

হজের সূচনা নবী ইব্রাহিম (আঃ)-এর সময় থেকে। কাবা শরিফ নির্মাণের পর আল্লাহ তাআলা ইব্রাহিম (আঃ)-কে আদেশ করেন, “তুমি মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার ক্ষীণ উটের পিঠে…”(সূরা হজ, আয়াত ২৭)। সে আহ্বান আজও ধ্বনিত হয় কোটি কোটি মানুষের অন্তরে।

ছবি সংগৃহীত

হজের প্রতিটি অনুষঙ্গ—চলাফেরা, তাওয়াফ, সাঈ, কঙ্কর নিক্ষেপ—সবকিছুই ইতিহাস-ভিত্তিক। হজরতে হাজেরা (আঃ) যখন শিশু ইসমাইল (আঃ)-কে নিয়ে মরুভূমিতে পানির খোঁজে ছুটে বেড়িয়েছিলেন, তখনই সৃষ্টি হয় সাফা ও মারওয়ার মাঝের সাঈ ritual। আর কাবার চারপাশে তাওয়াফ, মিনায় শয়তানকে লক্ষ্য করে কঙ্কর নিক্ষেপ, আরাফাতে অবস্থান—সবকিছুতেই নিহিত রয়েছে গভীর ঐতিহাসিক তাৎপর্য।

কাবা: একত্ব ও আনুগত্যের প্রতীক:

মক্কার কাবা শরিফ মুসলমানদের কিবলা। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মুসলমান সালাতের সময় মুখ ঘোরায় এই ঘরের দিকে। এটি শুধু একটি স্থাপনা নয়, বরং এটি একটি বিশ্বাস, একটি ঐক্য, একটি আত্মিক কেন্দ্রবিন্দু। আর হজের মাধ্যমে এই ঘরের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ পায় সর্বোচ্চ রূপে।

হজ: ত্যাগ ও আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ:

হজ মানে ত্যাগ—জীবনের বিলাসিতা, অহংকার, সম্পদের দম্ভ সবকিছু ছাড়তে হয় এই সফরে। হজযাত্রীরা ইহরাম পরেন, যা দুই টুকরো কাপড়ের বেশি কিছু নয়। কোনো রাজকীয় পোশাক নেই, নেই পরিচয়ের বাহার। সবাই সমান, সবাই আল্লাহর বান্দা। হজ শেখায় বিনয়, ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা।

আরাফার ময়দান হলো আত্মোপলব্ধির কেন্দ্র। এখানে দাঁড়িয়ে মানুষ কাঁদে, প্রার্থনা করে, নিজের গোনাহ স্বীকার করে। মুহাম্মদ (সাঃ) বিদায় হজে এখানেই তাঁর বিখ্যাত খুতবা প্রদান করেছিলেন, যেখানে তিনি মানবাধিকারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।

সংগৃহীত ছবি

হজ: বিশ্ব মুসলিমের মিলনমেলা:

হজ কেবল ব্যক্তিগত ইবাদত নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সম্মিলন। পৃথিবীর প্রতিটি মুসলিম দেশ থেকে মানুষ আসে। বিভিন্ন ভাষা, বর্ণ, সংস্কৃতির মানুষ একত্রিত হয়, এক কাপড়ে, এক অনুভূতিতে, এক প্রভুর সামনে।

এই অভিজ্ঞতা বিশ্ব মুসলিমের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় করে। এখানে কেউ বাঙালি, আরব, আফ্রিকান নয় সবাই কেবল মুসলমান। এই একত্ববোধ মুসলিম উম্মাহর জন্য হজের সবচেয়ে বড় শিক্ষা।

হজ এমন এক আহ্বান, যা আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন। যারা সামর্থ্য রাখে, তাদের ওপর এটি ফরজ। এই আহ্বানে সাড়া দেওয়া মানেই নিজেকে শুদ্ধ করা, অতীত গোনাহ মুছে ফেলা এবং নতুন করে জীবনের সূচনা। হজ মানুষকে মনে করিয়ে দেয় তার আসল পরিচয় সে একজন দাস, তার মালিক একমাত্র আল্লাহ।


পরবর্তী পর্ব: হজের প্রস্তুতি: শারীরিক, আর্থিক ও আত্মিক প্রস্তুতি