Home আইন-আদালত পরকীয়া প্রেম ও আর্থিক বিবাদের হত্যাকাণ্ডে দুই আসামিকে ফাঁসির রায়

পরকীয়া প্রেম ও আর্থিক বিবাদের হত্যাকাণ্ডে দুই আসামিকে ফাঁসির রায়

বিজেনসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: ঢাকার কেরানীগঞ্জে পরকীয়া প্রেম ও আর্থিক লেনদেনজনিত বিরোধের জেরে কবিরাজ মফিজ হত্যা মামলায় দুইজনকে ফাঁসির রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার এই রায় প্রদান করেন ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ইসরাত জাহান মুন্নী। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

মামলায় মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত প্রথম আসামি হলেন বিউটা হিন্দুপাড়ার আল আমিনের স্ত্রী মাকসুদা আক্তার লাকী ওরফে হাসিনা (৩৭) এবং দ্বিতীয় আসামি একই এলাকার মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের ছেলে সালাউদ্দিন (৩৯)। মামলার অপর আসামি নজরুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করায় তার বিরুদ্ধে দায় থেকে আগেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ ও তদন্তকারীদের বয়ান অনুযায়ী ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাতে। কেরানীগঞ্জের তারানগর ইউনিয়নের বিউটা কবরস্থান এলাকার সামনে থেকে কবিরাজ মফিজের হাত-পা-মাথাবিহীন মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় থানা পুলিশের এসআই এস এম মেহেদী হাসান। তিনি অজ্ঞাতনামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্তের সময় উঠে আসে নিহত মফিজের সঙ্গে মাকসুদা আক্তার লাকী–সালাউদ্দিনের পরকীয়া সম্পর্ক ও আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিরোধের বিষয়টি।

ঢাকা জেলা দক্ষিণ গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বাদি হয়ে তদন্তভার গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারি প্রথমে মাকসুদা আক্তার লাকী ও সালাউদ্দিনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দারা। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে তারা পলাতক হন। তদন্ত চলাকালে মোট উনিশজন সাক্ষী আদালতে বয়ান দেন। তদুপরি মরদেহের অবশিষ্ট অংশ থেকে সংগৃহীত নমুনা দিয়ে ডিএনএ পরীক্ষা করে তারই ছেলে কবিরাজ মফিজের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রবিউল ইসলাম বলেন, একজন মানুষের দেহ দশভাগে কেটে ফেলা এবং মাছের খাবারের জন্য খামারে ফেলে দেওয়া বিরলতম নৃশংস হত্যা। এই ধরনের বর্বরতা কোনও সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধারকৃত প্রমাণ এবং ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলেই অপরাধীদের দায় প্রমাণিত হয়েছে। তাই ফাঁসির সাজা চান তারা।

আদালত রায়ে দুই আসামির দোষ স্থির করে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিলে বাদীপক্ষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। মামলার সময় আসামিপক্ষে কেউ শুনানিতে হাজির না হওয়ায় বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন হয়।

সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন জানান গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া দুই আসামিকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, এই রায় ন্যায়ের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং ভবিষ্যতে মানবতাবিরোধী অপরাধ দমনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

চার বছর ধরে চলা তদন্ত ও বিচারপ্রক্রিয়ার পর অবশেষে মৃত্যুদণ্ডের রায়ে ন্যায়ের মুকুট পরানো হলো। পুলিশ খণ্ডিত দেহসহ সকল প্রমাণাদি সংগ্রহ করে যথাযথভাবে আদালতে উপস্থাপন করেছে এবং বিচারক এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের একমাত্র সার্থক শাস্তি হিসেবে ফাঁসি প্রযোজ্য হবে বলে আদেশ দিয়েছেন।