Home আইন-আদালত মালয়েশিয়ায় এলজিবিটি কর্মসূচির উদ্যোগে তোলপাড়, তদন্তে পুলিশ

মালয়েশিয়ায় এলজিবিটি কর্মসূচির উদ্যোগে তোলপাড়, তদন্তে পুলিশ

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

পেটালিং জায়ায় এলজিবিটি (সমকামী, উভকামী, রূপান্তরকামী ও তৃতীয় লিঙ্গ) সংশ্লিষ্ট একটি কর্মসূচি আয়োজনের সম্ভাবনা ঘিরে মালয়েশিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও আইনগত সংকট। দেশের প্রচলিত সামাজিক মূল্যবোধ এবং আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে।

সেলাঙ্গর রাজ্যের পুলিশ প্রধান দাতুক হুসেইন ওমর খান জানিয়েছেন, একটি রাজনৈতিক দলের যুব শাখা সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে ২১ জুন পেটালিং জায়ায় একটি এলজিবিটি বিষয়ক কর্মসূচির আয়োজনের পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়। বিষয়টি নজরে আসার পর সাধারণ মানুষ ও বেসরকারি সংগঠনের পক্ষ থেকে ১১টি জেলার থানায় মোট ২১টি অভিযোগ জমা পড়ে।

এ বিষয়ে তদন্ত চলছে মালয়েশিয়ার দণ্ডবিধির ২৯৮এ ধারা (ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানো) এবং ১৯৯৮ সালের যোগাযোগ ও মাল্টিমিডিয়া আইনের ২৩৩ ধারা (ইন্টারনেট ও ডিজিটাল মাধ্যমে আপত্তিকর কনটেন্ট প্রচার) অনুযায়ী। পুলিশ জানিয়েছে, প্রয়োজনে দণ্ডবিধির ৫০৫(সি) ধারাও প্রয়োগ করা হবে, যা জনসাধারণের মধ্যে ভয় বা উত্তেজনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রচার চালানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যবহৃত হয়।

দাতুক হুসেইন ওমর স্পষ্টভাবে বলেন, “এই ধরনের কর্মসূচি দেশের প্রচলিত আইন, সমাজের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতার পরিপন্থী। কেউ যদি কর্মসূচি আয়োজনে অটল থাকে, তাহলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মালয়েশিয়ায় এলজিবিটি অধিকার: আইন ও বাস্তবতা

মালয়েশিয়ায় এলজিবিটি অধিকার আইনত স্বীকৃত নয়। দেশটির ফৌজদারি আইনে সমকামিতাকে ‘অপ্রাকৃতিক অপরাধ’ হিসেবে গণ্য করা হয়, যার শাস্তি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে কারাদণ্ড, জরিমানা ও দোররা মারার বিধান। শরিয়াহ আইনের অধীনেও মুসলিম নাগরিকদের জন্য এলজিবিটি সম্পর্ক নিষিদ্ধ।

২০২১ সালে মালয়েশিয়ার ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেন, সরকার “এলজিবিটি জীবনধারা”র প্রসার রোধে সামাজিক ও আইনগত পদক্ষেপ নেবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ ও ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংস্থাগুলোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মানবাধিকার লঙ্ঘনের এই ধারা মালয়েশিয়ায় মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করছে।”

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের একজন প্রতিনিধি মালয়েশিয়া সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, দেশটিতে সমতার ভিত্তিতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে।

অন্যদিকে মালয়েশিয়ার রক্ষণশীল সামাজিক গোষ্ঠীগুলো পুলিশের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, “এটা আমাদের সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষার লড়াই।”

জনগণের প্রতিক্রিয়া ও সামাজিক বিভাজন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। একদিকে তরুণদের একটি অংশ সমান অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, অন্যদিকে রক্ষণশীল গোষ্ঠী এই ধরনের আয়োজনকে মালয়েশিয়ার ‘নৈতিক অবক্ষয়’ হিসেবে দেখছে।

পুলিশি সতর্কতা অব্যাহত

পুলিশ জানিয়েছে, এলজিবিটি কর্মসূচি নিয়ে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে গোয়েন্দা নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ চলমান থাকবে। যারা জনশৃঙ্খলা ব্যাহত করতে পারে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

📣 আপনি কী মনে করেন?
এই ইস্যুতে আপনার মতামত লিখে জানান আমাদের ফেসবুক পাতায়। আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন BusinessToday24.com-এ।