Home Third Lead বিজিএমইএ নির্বাচনে ফোরামের ভূমিধস জয়

বিজিএমইএ নির্বাচনে ফোরামের ভূমিধস জয়

বিজিএমইএ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা।

বিজিএমইএ নির্বাচন ২০২৫-২৭: ভূমিধস বিজয়ে নেতৃত্বে ফোরাম, সভাপতি হচ্ছেন মাহমুদ হাসান খান (বাবু)

বিজেনসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর ২০২৫-২৭ মেয়াদের নির্বাচনে ফোরাম প্যানেল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করেছে। ঢাকার ২৬টি পরিচালক পদের মধ্যে ২৫টিতে এবং চট্টগ্রামের ৯টি পদের মধ্যে ৬টিতে বিজয় অর্জন করে ফোরাম, ফলে ৩৫টি পদের মধ্যে ৩১টি দখলে নেয় তারা। বিপরীতে মাত্র ৪টি পদে জয় পায় দীর্ঘদিনের প্রভাবশালী জোট সম্মিলিত পরিষদ।

 ৩১ মে শনিবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের রেডিসন ব্লু হোটেলে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় ভোটগ্রহণ। পরে রাতেই ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এবারের নির্বাচনে ৩৫টি পরিচালক পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোট ৭৬ জন প্রার্থী। ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন এক হাজার ৮৬৪ জন গার্মেন্টস মালিক।

ফোরামের নেতৃত্বে মাহমুদ হাসান খান (বাবু)

ভোটের এই ফলাফল ফোরাম প্যানেলের জন্য শুধুই একটি বিজয় নয়, বরং এটি বিজিএমইএর ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব কাঠামো গঠনের দিকেও স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। কারণ প্যানেল লিডার হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন রাইজিং ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান (বাবু)। নির্বাচনে তাদের এমন চমকপ্রদ ফলাফলের ফলে মাহমুদ হাসান খানই বিজিএমইএর পরবর্তী সভাপতি হতে চলেছেন বলে প্রায় নিশ্চিত।

রাজনৈতিক পরিবর্তন ও বিজিএমইএর নেতৃত্ব সংকট

২০২৪ সালের মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে ৩৫টি পরিচালক পদেই জয়ী হয়েছিল সম্মিলিত পরিষদ। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংগঠনের তৎকালীন সভাপতি আব্দুল মান্নান কচি দেশ ছাড়েন এবং অজ্ঞাত স্থান থেকে পদত্যাগপত্র পাঠান। তার অনুপস্থিতিতে ডিজাইনটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার রফিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেন।

তবে তার নেতৃত্বে গঠিত বোর্ড পোশাক খাতের চলমান সংকট সামাল দিতে ব্যর্থ হয়। এ অবস্থায় ২০ অক্টোবর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনকে বিজিএমইএর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয়।

সম্মিলিত পরিষদের ভরাডুবি

প্রতিদ্বন্দ্বী সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বে ছিলেন চৈতি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম। এক সময় যারা বিজিএমইএর শাসন কাঠামোর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন, এবার তারা কার্যত নির্বাচনে পরাজিত হয়ে কোণঠাসা অবস্থানে চলে গেছেন।

নির্বাচনে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে অংশ নেয়া ঐক্য পরিষদের ব্যানারে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ৬ জন, তবে তারা কেউই উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাননি।

নতুন নেতৃত্বে নতুন প্রত্যাশা

ফোরাম প্যানেলের এই জয় দেশের পোশাক শিল্পে নতুন নেতৃত্বের সূচনা ঘটাবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। একদিকে যেভাবে ফোরাম সুসংগঠিত প্রচার-প্রচারণা ও পরিকল্পনার মাধ্যমে ভোটারদের মন জয় করতে পেরেছে, অন্যদিকে তা সম্মিলিত পরিষদের জন্য একটি আত্মসমালোচনার সুযোগও তৈরি করেছে।

অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, বৈদেশিক বাজারে প্রতিযোগিতা ও শ্রমঘন শিল্পের সংকটময় বাস্তবতায় নতুন পরিচালনা পর্ষদের জন্য অপেক্ষা করছে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এই বড় জয়ের মধ্য দিয়ে বিজিএমইএর নেতৃত্বে মাহমুদ হাসান খানের প্রত্যাবর্তন নতুন আশাবাদের বার্তা দিচ্ছে।