Home আন্তর্জাতিক মদিনার উত্তরে ‘আল-ফাহলাতাইন’ পাহাড়: ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী

মদিনার উত্তরে ‘আল-ফাহলাতাইন’ পাহাড়: ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী

‘আল-ফাহলাতাইন’ পাহাড়

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

পবিত্র নগরী মদিনার উত্তরের প্রাকৃতিক দৃশ্যপটে এক অবিচল পাহাড় দীর্ঘ শতাব্দী ধরে দাঁড়িয়ে আছে আল-ফাহলাতাইন। শুধু একটি ভৌগোলিক নিদর্শন নয়, এই পর্বতটি ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ স্মারক হিসেবেও বিবেচিত। রাসুল মুহাম্মদ (সা.) ৯ হিজরিতে যে তাবুক অভিযান পরিচালনা করেন, আল-ফাহলাতাইন ছিল সেই ঐতিহাসিক যাত্রাপথের এক গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন।

আল-উলার প্রাচীন রাস্তায় অবস্থিত এই পর্বতের নামকরণের পেছনে রয়েছে একটি ব্যতিক্রমী দৃষ্টিনন্দন উপাখ্যান। পাহাড়টির শীর্ষে অবস্থিত দুটি বিশাল পাথর দূর থেকে দেখলে মনে হয়, যেন একটি ষাঁড়ের শিং। আরবিতে ‘ফাহল’। সেই থেকেই এর নাম ‘আল-ফাহলাতাইন’ বা ‘দুই ষাঁড়’।

ইতিহাসবিদ ও পর্যটকদের নথিপত্রে এই স্থানটির বর্ণনা পাওয়া যায়। প্রখ্যাত মদিনাবিষয়ক ইতিহাসবিদ আলী আল-সামহুদির “ওয়াফা আল-ওয়াফা বি আখবার দার আল-মুস্তাফা” গ্রন্থে আল-ফাহলাতাইনকে মদিনা থেকে এক দিনের পথ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, পাহাড়টির দুই শৃঙ্গ নিচের পাথুরে গঠনের ওপর ছায়া বিস্তার করে আছে। আরেকজন ঐতিহাসিক ফিরুজাবাদী তার “আল-মাঘানিম আল-মুতাবা ফি মা’আলিম তাবা” গ্রন্থে এটিকে তাবুক যাত্রার অন্যতম দর্শনীয় নিদর্শন হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল-মাওলাবি “রিহলাত আল-শিতা ওয়া আল-সাইফ” গ্রন্থে আরো জানান, পাহাড়টির পশ্চিম পার্শ্বে প্রধান যাত্রাপথ ঘেঁষে এই দুই শৃঙ্গ অবস্থিত। অন্যদিকে আল-সুয়াইদি তার “আল-নাফহা আল-মিসকিয়্যাহ ফি আর-রিহলা আল-মাক্কিয়্যাহ” বইয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, একাকী দাঁড়ানো এই পাহাড়টি চারপাশের সমতল ভূমিতে এমনভাবে উদ্ভাসিত যে, এটি যেন উটপালকের মাঝে একটি বিশাল ষাঁড়—সেখান থেকেই এসেছে এই নামকরণ।

ইসলামী ইতিহাস গবেষক ফুয়াদ আল-মাগহামসি আল-ফাহলাতাইন, স্থানীয়ভাবে ‘ফাইফা আল-ফাহলাতাইন’ নামেও পরিচিত-চিহ্নিত করেছেন মদিনার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত শাজওয়া গ্রামের নিকটে। এক হাজার চুরাশি মিটার উচ্চতা থেকে পাহাড়টি আশপাশের সমভূমি ও পার্বত্য রেখা পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম।

মাগহামসি জানান, এই স্থানটি ঐতিহাসিক সিরীয় হজযাত্রার পথ ‘দারব আল-হাজ্জ আশ-শামী’তে একটি বিশ্রামস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। স্থানীয়ভাবে এটি ‘আন্তারের দুর্গ’ ও ‘আন্তারের আস্তাবল’ নামেও পরিচিত। প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য বলছে, সেখানে নির্মিত হয়েছিল কাঠামোগত স্থাপনাও-পিলগ্রিম ও ব্যবসায়ীদের সেবায় নির্মিত সুবিধাসমূহের চিহ্ন এখনো দৃশ্যমান।

সিরীয় হজযাত্রার এই পথ শুধু প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর নয়, বরং এটি নবী (দঃ) জীবনী ও পবিত্র তীর্থযাত্রার অসংখ্য স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শনে পরিপূর্ণ। আর এই সব কিছুরই এক নীরব সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে আল-ফাহলাতাইন।

◊আপনি কি ইসলামের ইতিহাসঘেঁষা এমন আরও অনাবিষ্কৃত স্থান নিয়ে জানতে আগ্রহী? আমাদের পোর্টাল বিজনেসটুডে২৪-এ নিয়মিত চোখ রাখুন—আপনার জানা ইতিহাসের বাইরেও রয়েছে বিস্ময়কর সব গল্প। শেয়ার করুন প্রতিবেদনটি, জানুন আরও ঐতিহাসিক নিদর্শনের গল্প, আর মন্তব্যে লিখে জানান—আপনি কোন পবিত্র যাত্রাপথ সম্পর্কে জানতে চান!