বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের ধাক্কামারা ইউনিয়নের ফকিরের হাট এলাকার এক ভুট্টাক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে তিনটি জীবন বিদ্যুতায়িত হয়ে থেমে গেল চিরতরে। বুধবার সকালে ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গোটা এলাকা শোকে স্তব্ধ।
নিহতদের একজন কলেজছাত্র জামিদুল ইসলাম স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হবেন। অন্য দুজন, রব্বানী (৩৫) ও শাহীন ইসলাম (৪৫) দুজনেই ছিলেন পরিবারের ভরসার বাতিঘর। ঈদের আগে অতিরিক্ত রোজগারের আশায় তাঁরা ভুট্টা কাটার কাজে নামেন। কে জানত, এটিই হবে তাঁদের জীবনের শেষ সকাল।
১৪ জনের একটি দল ওই ভুট্টাক্ষেতে কাজ করছিল। জমির ভেতর পড়ে থাকা একটি ছেঁড়া বিদ্যুতের তার সবার চোখ এড়িয়ে যায়। তখন বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ ছিল, তাই কেউ বুঝতেই পারেনি বিপদ ঘনিয়ে এসেছে।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ চালু হয় বিদ্যুৎ। মুহূর্তেই বিদ্যুতায়িত হন কয়েকজন। সবার সামনে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন জামিদুল। তাঁর নিথর দেহ ছুঁয়ে শিউরে ওঠে সহকর্মীরা। রব্বানী, শাহীন এবং শাহীনের ভাই জয় ইসলামকে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পথেই প্রাণ হারান রব্বানী ও শাহীন।
বেঁচে যান কেবল জয় ইসলাম। চোখে জল নিয়ে তিনি বলেন, “আমি অনুভব করি পায়ে কাঁপুনি দিচ্ছে, বুঝি বিদ্যুৎ এসেছে। ফোন করতে থাকি অফিসে, কেউ ধরছিল না। আমরা যদি একটু আগে জানতে পারতাম…”
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক আবুল কাশেম জানান, “তাদের আনার সময়ই দুজন মারা গিয়েছিলেন। একজনের অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক।”
এই মৃত্যুর দায় কার? প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন স্থানীয়রা। তাঁরা বলছেন, সময়মতো ছেঁড়া তার সরানো হলে, সজাগ থাকলে, হয়তো এই অকাল মৃত্যু ঠেকানো যেত।
ঈদের আনন্দ এখন এই তিন পরিবারে কান্নায় রূপ নিয়েছে। নিস্তব্ধ বাড়িগুলোয় এখন শুধু শোনা যাচ্ছে আহাজারি। একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটি নেই কীভাবে চলবে সংসার, কে সামলাবে মা-বাবার চোখের জল, এসব প্রশ্ন নিয়ে থমকে আছে পঞ্চগড়ের একটি ভুট্টাক্ষেত।










