বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর চামড়া এবারও চরম অব্যবস্থাপনা আর বাজার সংকটের শিকার হয়েছে। অনেকেই ক্রেতা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত চামড়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করেছেন, কেউ আবার মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে গড়ে প্রতি পিসে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত লোকসানে পড়েছেন।
আতুরার ডিপো এলাকার আড়তে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ চামড়া এসেছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলাতেও সংরক্ষিত আছে আরও দুই লাখ চামড়া। গরু ও মহিষের চামড়া প্রতিটি কেনা হয়েছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায়।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার চট্টগ্রামে কোরবানির পশুর সংখ্যা ছিল প্রায় নয় লাখ। তার মধ্যে চার লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বাস্তবে সংগ্রহ হয়েছে কম। অনেক চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে।
সরকার ঢাকায় লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছিল প্রতি বর্গফুট ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। কিন্তু চট্টগ্রামে অধিকাংশ লেনদেনই হয়েছে এর চেয়ে অনেক কম দামে। ব্যবসায়ীদের দাবি, লবণের সংকট, সংরক্ষণে অব্যবস্থাপনা ও বাজারে চামড়ার প্রকৃত চাহিদা না থাকায় সরকারি দাম কার্যত উপেক্ষিত থেকেছে।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন জানান, নগরীতে এখন পর্যন্ত দুই লাখ চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে, এর মধ্যে দেড় লাখ গরু-মহিষের। বাকি ছাগল ও ভেড়ার। আরও প্রায় দুই লাখ চামড়া উপজেলাগুলোতে রয়েছে, যেগুলো পরে চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকায় পাঠানো হবে।
তিনি বলেন, “আমি সাত হাজার চামড়া কিনেছি। বিকালের পর থেকে দাম কমতে থাকে। রাতে চামড়া ৩০০ টাকার নিচেও বিক্রি হয়েছে। মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রতিনিধিরাই বেশি এসেছেন। অনেক চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে।”
চট্টগ্রামে বর্তমানে প্রায় ২০০টি আড়ত রয়েছে। এই খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ জড়িত। এক সময় শতাধিক বড় ব্যবসায়ী থাকলেও এখন মাত্র ৩৫ জন বড় ব্যবসায়ী সক্রিয় আছেন। চট্টগ্রামে মাত্র একটি ট্যানারি থাকায় ঢাকার ট্যানারির উপর নির্ভর করতে হয় স্থানীয় আড়তদারদের।
চামড়ার দর সরকার নির্ধারণ করলেও অনেক সময় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া ও লবণযুক্ত চামড়ার দামের পার্থক্য না বুঝে বেশি দামে কিনে ফেলেন। পরে লোকসানে বিক্রি করতে বাধ্য হন।
খুলশী এলাকার এক ব্যক্তি জানান, “আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে ২২টি গরু কোরবানি দেওয়া হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত একজন ক্রেতাও আসেনি। কষাই পর্যন্ত নিতে রাজি হয়নি। পরে একটি এতিমখানায় ফোন দিলে তারা এসে নিয়ে যায়।”
মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান জানান, তিনি ১৭০টি চামড়া কিনেছিলেন গড়ে ৩৫০ টাকায়, বিক্রি করেছেন মাত্র ২৫০ টাকায়। প্রতি চামড়ায় লোকসান হয়েছে ১০০ টাকা করে। কিছু চামড়া বিক্রিরও সুযোগ পাননি, ফেলে দিতে হয়েছে।
সরকার এবার প্রথমবারের মতো দেশব্যাপী মাদ্রাসা ও এতিমখানায় চামড়া সংরক্ষণের জন্য ৩০ হাজার টন লবণ বরাদ্দের পরিকল্পনা করলেও বাস্তবে তা কমে আসে মাত্র ১১ হাজার ৫৭১ টনে।
বিভিন্ন উপজেলা থেকেও একই অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকেই ক্রেতার অভাবে মাদ্রাসায় দিয়েছেন, কেউ কেউ নষ্ট হওয়ার ভয়ে পুঁতে ফেলেছেন। পুরো চট্টগ্রামজুড়েই এবারের কোরবানির চামড়া নিয়ে চিত্র ছিল হতাশাজনক।