আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইসলামাবাদ: পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান বর্তমানে আদিয়ালা কারাগারে বন্দি থাকলেও, আগামী ১১ জুন তাঁর জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে জানিয়েছেন পিটিআইর বর্তমান চেয়ারম্যান গোহর আলি খান। ইসলামাবাদ হাইকোর্টে সেই দিনই হবে বহুল আলোচিত আল-কাদির ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ইমরান খান এবং তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবির সাজার স্থগিতাদেশ সংক্রান্ত শুনানি।
আল-কাদির ট্রাস্ট মামলার পটভূমি
মামলাটি যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি ও পাকিস্তানের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী মালিক রিয়াজের সম্পৃক্ততায় গঠিত একটি বিতর্কিত ১৯০ মিলিয়ন পাউন্ডের বন্দোবস্ত ঘিরে। এনসিএ-র জব্দ করা অর্থ পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হলেও, অভিযোগ অনুযায়ী ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকার সেই অর্থ জাতীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে মালিক রিয়াজের কোম্পানি বাহরিয়া টাউনের দেনা পরিশোধে ব্যবহার করে। এর বিনিময়ে ইমরান খান ও বুশরা বিবি পরিচালিত আল-কাদির ট্রাস্টকে শত শত একর জমি দান করা হয়, যা দিয়ে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল।
গৃহবন্দি বুশরা বিবি, রাজনৈতিক চাপের অভিযোগ
গোহর আলি খান দাবি করেছেন, বুশরা বিবিকে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ছাড়াই আটক রাখা হয়েছে, যা ইমরান খানের ওপর রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করার একটি হাতিয়ার। তিনি জানান, “ইমরান খানের মুক্তির জন্য কোনো আপস করা হবে না।” আগামী ১১ জুনের শুনানিকে তিনি “নির্ধারক দিন” হিসেবে আখ্যা দেন।
পিটিআইর সম্ভাব্য আন্দোলন
ইমরান খানের মুক্তির দাবিতে পিটিআই একটি নতুন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গোহর জানান, এই প্রতিবাদ হবে “জেল থেকে ইমরান খানের নেতৃত্বে পরিচালিত”। আগামী ৯ জুন পিটিআই একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের বাজেটসংক্রান্ত অবস্থান ও আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করবে। পিটিআই নেতা ও খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী আলি আমিন গান্দাপুর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইমরান খান মুক্ত না হলে ঈদের পর দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হবে।
সরকারের আলোচনার আহ্বান
সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা রানা সানাউল্লাহ পিটিআইকে আলোচনার টেবিলে বসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “নির্বাচনী সংস্কার ও জাতীয় স্থিতিশীলতার জন্য পিটিআইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে।”
মামলার অন্যান্য দিক ও অভিযুক্তরা
এনএবি অভিযোগ এনেছে, ইমরান খান সরকারি তহবিল ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য ব্যবহার করেছেন। মামলার অন্যান্য অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন মালিক রিয়াজ, তাঁর ছেলে আহমেদ আলি রিয়াজ, শেহজাদ আকবর ও জুলফি বুখারি – যাঁরা তদন্তে অনুপস্থিত থাকায় বর্তমানে proclaimed offender হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজনৈতিক মেরুকরণ ও পিটিআইর অবস্থান
গোহর আলি খান পিটিআইয়ের অভ্যন্তরীণ বিভেদের গুজব উড়িয়ে দিয়ে জানান, দলের অভ্যন্তরে ঐক্য অটুট এবং ইমরান খানের নেতৃত্বে সবাই আস্থাশীল। ২০২৪ সালের নির্বাচনে স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে সবচেয়ে বেশি আসন জিতেও প্রতীক হারানোর কারণে সরকার গঠনে ব্যর্থ হওয়ার জন্য তিনি “ম্যান্ডেট চুরি”-র অভিযোগ তোলেন।
১১ জুনের শুনানি শুধু ইমরান খান ও বুশরা বিবির মুক্তির দিক থেকেই নয়, বরং গোটা পাকিস্তানের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যই এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে যাচ্ছে। পিটিআই আন্দোলনে গেলে এবং সরকার আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে গেলে, দেশ এক নতুন রাজনৈতিক মোড়ে প্রবেশ করতে পারে।