Home ইতিহাস ও ঐতিহ্য ব্রিটিশ আইনে দাসপ্রথা: কীভাবে আইনই ছিল নিপীড়নের অস্ত্র

ব্রিটিশ আইনে দাসপ্রথা: কীভাবে আইনই ছিল নিপীড়নের অস্ত্র

৩য় পর্ব:

আমিরুল মোমেনিন: ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ কেবল বন্দুক আর বাণিজ্য দিয়ে টিকে থাকেনি; আইনের জালও ছিল এই নিপীড়নের অন্যতম হাতিয়ার। দাসপ্রথাকে শুধু সামাজিকভাবে নয়, আইনগতভাবেও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে এমন বহু আইন চালু ছিল, যা দাসপ্রথাকে বৈধতা দিত এবং দাসদের মানবিক অধিকার থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত করত।

১৭শ থেকে ১৮শ শতাব্দীর মধ্যে ব্রিটেনে দাসপ্রথা সরাসরি বৈধ না হলেও, উপনিবেশগুলোতে তা পুরোপুরি আইনগতভাবে অনুমোদিত ছিল। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, আমেরিকান উপনিবেশ ও আফ্রিকার কিছু অংশে Slave Code নামে পরিচিত কিছু আইন কার্যকর ছিল। এই আইনগুলোর মূল লক্ষ্য ছিল দাসদের কণ্ঠরোধ করা, তাদের উপর নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা, এবং মালিকদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রদান।

একটি দাস কী পরবে, কোথায় যাবে, কার সঙ্গে কথা বলবে – সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা হতো আইনের মাধ্যমে। যদি কোনো দাস মালিকের অনুমতি ছাড়া পালিয়ে যেত, তাহলে তাকে ধরে এনে প্রকাশ্যে দণ্ড দেওয়া হতো, কখনো হাত-পা কেটে ফেলা হতো, কখনো জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হতো। এইসব শাস্তি ছিল আইনত বৈধ এবং মালিককে অপরাধী নয়, বরং ‘শৃঙ্খলা রক্ষাকারী’ হিসেবে গণ্য করা হতো।

১৮০৭ সালে ব্রিটেনে দাসব্যবসা নিষিদ্ধ হলেও দাসপ্রথা বিলোপ হয় আরও বহু বছর পরে, ১৮৩৩ সালে Slavery Abolition Actপাসের মাধ্যমে। তাও ওই আইনের একটি অংশে বলা ছিল, “দাসরা সঙ্গে সঙ্গে মুক্তি পাবে না, বরং ‘অ্যাপ্রেন্টিস’ হিসেবে আরও ছয় বছর মালিকের অধীনে কাজ করতে হবে বিনা মজুরিতে।” অর্থাৎ আইনটি শোষণের আরও একটি নতুন পথ তৈরি করেছিল।

শুধু আইন নয়, আদালতগুলোকেও ব্যবহার করা হতো দাস মালিকদের পক্ষে। কোনো দাস যদি মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলত, সেটা শোনা তো দূরের কথা, অভিযোগকারীকে আরও শাস্তি দেওয়া হতো। এভাবে আইন পরিণত হয়েছিল দাসত্ব বজায় রাখার এক মারাত্মক অস্ত্রে।

এই পর্ব আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আইন কেবল ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যম নয়, বরং যখন তা অন্যায়ের পক্ষ নেয়, তখন তা সবচেয়ে ভয়ংকর নিপীড়নযন্ত্র হতে পারে।


এই ইতিহাস ভুলে গেলে চলবে না। আইনের ছায়াতেও কীভাবে নিপীড়ন চালানো হয়েছে, তা জানা জরুরি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য। ইতিহাস জানুন, অন্যায়কে প্রশ্ন করুন। আগামী পর্বে পড়ুন কীভাবে দাসের ওপর নির্যাতনকে ‘শৃঙ্খলা’ বলে চালানো হতো।