Home আন্তর্জাতিক সাগর পেরিয়ে হজে: ছয় ব্রিটিশ তীর্থযাত্রীর দুই মাসের সাহসিক অভিযান

সাগর পেরিয়ে হজে: ছয় ব্রিটিশ তীর্থযাত্রীর দুই মাসের সাহসিক অভিযান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিনা নৌ-প্রশিক্ষণে ৫৯ দিন সাগর পাড়ি দিয়ে লন্ডন থেকে হজ পালনে সৌদি আরবে এসে পৌঁছেছেন ছয় ব্রিটিশ নাগরিক। এই ব্যতিক্রমী যাত্রার পর তাঁরা সৌদি আরবের কর্তৃপক্ষের আতিথেয়তায় অভিভূত।

এই দুঃসাহসিক অভিযাত্রা শুরু হয় ১ এপ্রিল, যখন ছয়জনের একটি দল একটি ১৯৭৮ সালের ‘ওয়েস্টারলি ৩৩ কেচ’ নৌযানে চড়ে লন্ডন ত্যাগ করেন। নানা ঝড়-ঝঞ্ঝা, বৈরী আবহাওয়া আর সমুদ্রের অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে পাড়ি দেন ইংলিশ চ্যানেল, ইউরোপের দক্ষিণ উপকূল ও ভূমধ্যসাগরের দ্বীপপুঞ্জ। শেষে সুয়েজ খাল ও লোহিত সাগর পেরিয়ে ২৭ মে তাঁরা পৌঁছান জেদ্দায়, হজের মাত্র এক সপ্তাহ আগে।

দলটির সদস্যরা হলেন আবদুল ওয়াহিদ, তৌসিফ আহমেদ, জোডি ম্যাকইনটায়ার, দব্বির উদ্দিন, তাহের আখতার ও আয়াজ খান। বয়স ২৭ থেকে ৪৭ বছরের মধ্যে হলেও কেউই পেশাদার নাবিক নন। কেউ আইটি পেশাজীবী, কেউ সমাজকর্মী, আবার কেউ মানবিক উন্নয়নকর্মী। তবে এই অভিযাত্রায় সবাই সমুদ্রযাত্রার কৌশল, নৌযান রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিপদ সামলানোর বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।

হজের সময় মিনা প্রাঙ্গণে আরব নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দলনেতা ওয়াহিদ বলেন, “সমুদ্রযাত্রা আমাদের জীবনে সবচেয়ে বড় শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা এনে দিয়েছে। সৌদি আরবে পৌঁছার মুহূর্ত ছিল অবর্ণনীয়—ঝড়ের পর হঠাৎ দূরে সৌদি পাহাড় দেখার সেই অনুভূতি এখনও গায়ে কাঁটা দেয়।”

তিনি সৌদি আরবের হজ ব্যবস্থাপনা ও সাধারণ মানুষের আন্তরিকতায় মুগ্ধতা প্রকাশ করে বলেন, “পথে চলতে গিয়ে হঠাৎ একজন বয় স্কাউট এসে বরফ প্যাকেট দিয়ে দিচ্ছে, একজন পুলিশ বোতল ভর্তি ঠান্ডা পানি হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি দমকল বাহিনী পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষকে ঠান্ডা জল ছিটিয়ে দিচ্ছে।”

সহযাত্রী আয়াজ খান বলেন, “এই যাত্রা ছিল আত্মিক সাধনার একটি প্রতীক। আমরা শুধু নৌযান চালাইনি, বরং আত্মিক জাগরণ ও ধৈর্যের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে হজে পৌঁছেছি।” তিনি জানান, পরিবারের কেউ আগে হজ করেননি। তাই নিজের নৌযাত্রা শোনার পর মা উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বলেছিলেন, “এটা শুধু আমার জন্য নয়, এটা এক পবিত্র অভিযাত্রা।”

তাঁদের নৌপথে যাত্রা ছিল লন্ডন থেকে মার্সেই, তারপর কর্সিকা, সার্ডিনিয়া, সিসিলি ও ক্রিট হয়ে সুয়েজ খাল। এরপর লোহিত সাগর পাড়ি দিয়ে অবশেষে জেদ্দা।

আয়াজ বলেন, “এই সমুদ্রযাত্রা আমাদের শিখিয়েছে যে আত্মিক গন্তব্যে পৌঁছাতে হলে অনেক সময় অনির্ধারিত পথে যেতেই হয়। তবে বিশ্বাস, ধৈর্য আর নম্রতা থাকলে ঝড়ের মধ্যেও পবিত্র ঠিকানায় পৌঁছানো সম্ভব।”