আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইরান থেকে ইসরায়েলের দূরত্ব প্রায় ১,৫০০ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে কীভাবে ইরান সরাসরি ইসরায়েলকে মিসাইল দিয়ে আঘাত করছে- এ প্রশ্ন এখন অনেক সাধারণ মানুষের মনেও। তাদের কাছে এটা শুধু যুদ্ধ নয়, প্রযুক্তি ও ভূরাজনীতির একটি জটিল খেলা।
দূরত্ব কিন্তু বাধা নয়
ইরান থেকে ইসরায়েল পর্যন্ত সরাসরি স্থলসীমান্ত নেই। মাঝখানে রয়েছে ইরাক, জর্ডান এবং সিরিয়ার মতো দেশ। তবুও এইসব দেশ পার করে ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল এবং ড্রোনগুলো কীভাবে ইসরায়েলের মাটিতে আঘাত করছে—তার পেছনে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি ও পরিকল্পিত আকাশপথ ব্যবহারের কৌশল।
মিসাইলের পরিসীমা ও গতি
ইরানের হাতে থাকা বিভিন্ন ধরনের দূরপাল্লার মিসাইল, যেমনঃ
- Shahab-3 (রেঞ্জ: ১,৩০০ কিমি),
- Ghadr (রেঞ্জ: ১,৬০০ কিমি),
- Emad (রেঞ্জ: ১,৭০০ কিমি),
এবং হাইপারসোনিক Fattah-1 (রেঞ্জ: প্রায় ১,৪০০ কিমি)
এইসব মিসাইল একাধিক মিনিটের ব্যবধানে ইসরায়েল পৌঁছাতে সক্ষম।
বিশেষত Fattah-1 মিসাইল ঘন্টায় প্রায় ১৫,০০০ কিলোমিটার গতিতে (Mach 13–15) ছুটে আসতে পারে, যা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে কার্যত অতিক্রম করতে পারে।
কীভাবে পথ নির্ধারণ হয়?
মিসাইল উৎক্ষেপণের পর এটি নির্দিষ্ট গতিপথে মাঝের দেশগুলোর আকাশপথ অতিক্রম করে। সাধারণত এসব হামলা খুব উঁচু স্তরের ‘sub-orbital’ পথে পরিচালিত হয়, যাতে অন্য দেশের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হস্তক্ষেপ করতে না পারে। এছাড়া ইরান আঞ্চলিক মিত্র মিলিশিয়াগুলোর মাধ্যমেও (যেমন সিরিয়ায় অবস্থানরত হিজবুল্লাহ বা অন্যান্য শিয়া গোষ্ঠী) ইসরায়েল ঘেঁষে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা
ইসরায়েল বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চালু রেখেছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- Iron Dome – স্বল্প দূরত্বের রকেট প্রতিরোধে ব্যবহৃত
- David’s Sling – মাঝারি দূরত্বের মিসাইল প্রতিহত করতে ব্যবহৃত
- Arrow-3 – দীর্ঘপাল্লার ব্যালিস্টিক মিসাইল ধ্বংসে সক্ষম
তবে এত প্রতিরক্ষা থাকার পরও, ইরানের কিছু মিসাইল ও ড্রোন এই ব্যবস্থাগুলোকে ফাঁকি দিয়ে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে, বিশেষ করে যখন আক্রমণ একযোগে ও বিভিন্ন কোণ থেকে করা হয়।
প্রযুক্তি, কৌশল এবং যুদ্ধনীতি
ইরান আগেই এই হামলার পরিকল্পনা করে রেখেছিল এবং প্রথাগত সামরিক ঘাঁটির বাইরে থেকেও আক্রমণ ছুড়েছে। শুধু মিসাইলই নয়, ড্রোনের মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর হামলা করে প্রতিরক্ষা ব্যস্ত রাখে, যাতে আসল মিসাইল লক্ষ্যবস্তুতে সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারে।
ইসরায়েলের প্রতিউত্তরে ড্রোন ঘাঁটি, রাডার সিস্টেম ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। ফলে অঞ্চলজুড়ে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়।
সারসংক্ষেপ:
- দূরত্ব এখন আর বাধা নয়। আধুনিক প্রযুক্তি ও গতি দিয়ে ইরান থেকে সরাসরি ইসরায়েল লক্ষ্যবস্তু করা সম্ভব।
- মধ্যবর্তী দেশগুলোর আকাশসীমা ব্যবহার করা হয় উচ্চ পর্যায়ের গতি ও নির্ভুল পথচিহ্নিত সিস্টেমের মাধ্যমে।
- প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও শতভাগ কার্যকর নয়, বিশেষ করে হাইপারসোনিক বা উন্নত ব্যালিস্টিক হামলার ক্ষেত্রে।
- ড্রোন ও মিলিশিয়া হামলার সমন্বয়ে ইরান ইসরায়েলকে ভিন্ন দিক থেকে চাপে ফেলছে।
এই যুদ্ধের প্রকৃতি এখন আর শুধু সীমান্তে সীমাবদ্ধ নয়, বরং আকাশপথ, প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে এক দমবন্ধ করা খেলা চলছে।