বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট: সিলেটের জাফলংয়ে দুই অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে দিয়ে বিক্ষোভ ও ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগানের ঘটনায় বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু করেছে দলটি।
শনিবার (১৪ জুন) সকালে জাফলং এলাকা পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের গাড়িবহর বল্লাঘাট এলাকায় আটকে দেয় স্থানীয় শ্রমিক ও বিএনপি-সম্পৃক্ত নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভকারীরা পাথর কোয়ারি চালুর দাবিতে স্লোগান দেন, রাস্তায় শুয়ে পড়েন, এবং উপদেষ্টাদের সামনে ‘ভুয়া-ভুয়া’ বলে চিৎকার করেন।
এ ঘটনায় রোববার (১৫ জুন) যুবদলের কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদ খানকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম নয়ন।
সিলেট জেলা যুবদলের সভাপতি মোমিনুল ইসলাম বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, উপদেষ্টাদের বহরে বাধা দেওয়ার ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে জাহিদ খানকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে অন্য যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী জানিয়েছেন, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মতো অপকর্মে যারা যুক্ত হয়েছেন, তাদের চিহ্নিত করে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় ছাত্রদলের স্থানীয় নেতাদের সম্পৃক্ততার কথাও গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।

ভিডিওচিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, জাফলংয়ের বল্লাঘাট এলাকায় উপদেষ্টাদের গাড়ি আটকে সামনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আজির উদ্দিন। তার নেতৃত্বেই সেখানে ‘ভুয়া’ স্লোগান ছড়িয়ে পড়ে। আজির উদ্দিন বলেন, শ্রমিকদের জীবন-জীবিকার স্বার্থে পাথর কোয়ারি খুলে দিতে হবে। তিনি আরও অভিযোগ করেন, কিছু দালাল চক্র উপদেষ্টাদের ভুল তথ্য দিয়েছে।
ঘটনার দিন পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। গোয়াইনঘাট থানার ওসি সরকার মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ জানান, আকস্মিকভাবে গাড়ি আটকে দিলে পুলিশ দ্রুত সরিয়ে উপদেষ্টাদের নিরাপদে হরিপুর গেস্ট হাউসে পৌঁছে দেয়।
এই ঘটনার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এর ফলে উপদেষ্টাদের পরবর্তী ভোলাগঞ্জ সফরও বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে জাফলংয়ে পাথর উত্তোলনের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জাফলংয়ে পাথর উত্তোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় এই এলাকায় আর পাথর উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হবে না। বরং পর্যটনকে কেন্দ্র করে বিকল্প কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে জাফলংকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) এবং ২০১৬ সালে ভূতাত্ত্বিক ঐতিহ্য এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। এরপর থেকে সেখানে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়। তবে গত বছরের আগস্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতিতে সেখানে এক কোটি ঘনফুট পাথর লুট হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে ওই এলাকাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনা, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং স্থানীয়দের জীবিকা সংকট—তিনটি বিষয় নতুন করে মুখোমুখি অবস্থানে এসেছে।