ধারাবাহিক প্রতিবেদন: লটারি ও প্রেমের ফাঁদ
পর্ব ৩:
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন ডেটিং অ্যাপের যুগে মানুষের সম্পর্ক তৈরি সহজ হলেও প্রতারণার জাল আরও সুক্ষ্ম হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়া প্রতারণার ধরন হলো ‘রোমান্স স্ক্যাম’—যেখানে প্রেমের নামে বিশ্বাস অর্জন করে প্রতারকরা হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ ডলার।
একটি বাস্তব কাহিনী
২০২১ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ৬৩ বছর বয়সী এক বিধবা নারী ফেসবুকে পরিচিত হন এক ‘আমেরিকান আর্মি অফিসার’-এর সঙ্গে, যে তখন আফগানিস্তানে ‘ডিউটিতে’ ছিল। কথাবার্তা থেকে গাঢ় সম্পর্ক তৈরি হয়। সেই ব্যক্তি জানায়, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্লক হয়ে গেছে এবং দেশে ফিরতে কিছু সাহায্যের প্রয়োজন। প্রথমে ৫০০ ডলার, পরে একে একে মোট ২ লাখ ৩০ হাজার ডলার পাঠান ওই নারী। পরে জানা যায়, এ সবই ছিল নাইজেরিয়ার একটি প্রতারক চক্রের কাজ।
প্রতারণার কৌশল
- ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা ডেটিং সাইটে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি
- প্রতারক নিজেকে সেনা কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী বা ডাক্তার পরিচয় দেয়
- দীর্ঘদিন কথা বলে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলে
- পরে হঠাৎ করে বিপদে পড়ার নাটক করে—যেমন ভিসা জটিলতা, ব্যাংক ফ্রিজ, জরুরি অপারেশন
- ধীরে ধীরে অর্থ সহায়তা চেয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়
বাংলাদেশে এর প্রতিধ্বনি
এ ধরনের রোমান্স স্ক্যামের শিকার বাংলাদেশেও হয়েছেন বহু নারী ও পুরুষ। ২০২৩ সালে ঢাকার ধানমন্ডির এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ‘ব্রিটিশ সৈনিক’ পরিচয়ে এক যুবকের প্রেমে জড়িয়ে পড়ে প্রায় ১২ লাখ টাকা হারিয়েছেন। তার সঙ্গে প্রতারক ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন, বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে অর্থ আদান-প্রদান করেছে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
- অনলাইনে সম্পর্ক তৈরি হলে তা যাচাই করুন
- প্রেমের নাম করে অর্থ চাইলেই সতর্ক হোন
- পরিবারের কারো সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করুন
- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নিন
পরবর্তী পর্বের ইঙ্গিত
👉 পর্ব ৪: পাকিস্তানে ‘বিদেশি উপহারের ফাঁদ’ – প্রেমিক পাঠিয়েছে স্বর্ণালংকার, কিন্তু কাস্টমস চায় টাকা!
পরবর্তী পর্বে জানবেন, কীভাবে ‘বিদেশি প্রেমিক’ বা ‘বিদেশফেরত আত্মীয়’ পরিচয়ে চক্রগুলো ভারি উপহারের নামে টাকা আদায় করে।