বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক:
তরুণদের ভাবনা বদলেছে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি হয়েছে ধারালো, প্রশ্নমুখর ও সচেতন। তারা এখন আর চটকদার স্লোগান বা মুখরোচক বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দেয় না। তারা চায় সত্যিকারের দায়িত্বশীলতা। তারা দেখে, কে কী বলছে নয়, বরং কে কী করছে। এই কাজের মধ্যেই তারা খুঁজে নেয় ব্র্যান্ডের অন্তর, মনোভাব ও আন্তরিকতার প্রতিফলন।
আজকের একজন তরুণ ক্রেতা শুধুমাত্র দাম ও ডিজাইনের তুলনায় ব্র্যান্ডকে বিচার করে না। সে খোঁজে—এই ব্র্যান্ড সামাজিকভাবে কতটা দায়বদ্ধ? এটি পরিবেশের ক্ষতি করে কি? শ্রমিকদের সঙ্গে কেমন আচরণ করে? তাদের উৎপাদন ন্যায্য কি না? তারা পণ্য তৈরি করে মানুষকে উপকার করার জন্য, নাকি শুধু মুনাফার জন্য?
সুমাইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বলেন, “আমি আগে শুধু রঙ আর ফ্যাশনের দিকেই তাকাতাম। এখন আমি খুঁজে দেখি, তারা কীভাবে পরিবেশবান্ধবভাবে তৈরি করছে, শিশুশ্রম ব্যবহার করে কি না, সমাজে কোনো কাজ করছে কি না।”
এই পরিবর্তনের মূলে আছে তরুণদের অভিজ্ঞতা, ডিজিটাল জ্ঞান ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এখন এক ক্লিকে তারা দেখে ফেলতে পারে একটি ব্র্যান্ডের সব ইতিহাস—সাফল্য, ব্যর্থতা, প্রতিশ্রুতি ও ভাঙন। তারা অনুসরণ করে যেসব ব্র্যান্ড মানবিক উদ্যোগ নেয়, দুর্যোগে পাশে দাঁড়ায়, তরুণদের জন্য স্কলারশিপ দেয় কিংবা স্থানীয় শিল্পকে সহায়তা করে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সম্প্রতি একটি পরিচিত পোশাক ব্র্যান্ড তাদের আয়ের একটি অংশ তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য ট্রেনিং ও স্টার্টআপ সহায়তায় ব্যয় করছে। এই উদ্যোগটি ভাইরাল হয়নি কোনো বিজ্ঞাপনে, বরং তরুণদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ তারা দেখেছে, এটি একটি ব্র্যান্ডের নিঃস্বার্থ কাজ—যার পেছনে ছিল না কোনো ক্যামেরা বা প্রপস, ছিল শুধু আন্তরিকতা।
অন্যদিকে, কিছু ব্র্যান্ড রয়েছে যারা বাহারি কথায় ভরপুর হলেও ভেতরে ফাঁপা। তাদের ক্যাম্পেইন যতই ঝলমলে হোক না কেন, কর্মীদের প্রতি অসদাচরণ বা মুনাফার লোভে পরিবেশ ধ্বংসের মতো খবর তরুণদের চোখে এক মুহূর্তে সেই ব্র্যান্ডকে ‘অবিশ্বাসযোগ্য’ করে তোলে।
আজকের তরুণদের কাছে তাই ব্র্যান্ডের মূল শক্তি হলো ‘সামাজিক দায়িত্ববোধ’ এবং ‘স্বচ্ছতা’। তারা বিশ্বাস করে, একটি ব্র্যান্ড যদি সত্যিকারের কিছু করতে চায়, তবে সেটির জন্য প্রচার নয়, দায়িত্বই যথেষ্ট।
আর এখানেই জন্ম নেয় ব্র্যান্ড লয়ালটি। তরুণরা সেই ব্র্যান্ডকে দীর্ঘমেয়াদে গ্রহণ করে, যে ব্র্যান্ড কেবল নিজের প্রচার নয়, বরং সমাজের উন্নয়নের কথা ভাবে। যারা কঠিন সময়েও পাশে থাকে—কথায় নয়, কাজে।
তারা বলছে, “তুমি আমার সমস্যার পাশে দাঁড়াও, আমি তোমাকে মনে রাখব। তুমি দায়িত্ববান হলে, আমি তোমার প্রতি বিশ্বস্ত থাকব।”
এই বিশ্বাস একদিনে জন্মায় না। এটি গড়ে ওঠে সময়ের সঙ্গে, প্রতিশ্রুতির ভেতরে লুকানো নীরব কাজ দিয়ে। তরুণরা এমন ব্র্যান্ড চায়, যারা সহযাত্রী হয়ে থাকে—ক্যামেরার সামনে নয়, জীবনের মঞ্চে।
পরবর্তী ও শেষ পর্বে থাকবে:
“তোমার পথে, তোমার ব্র্যান্ড – গল্পের উপসংহার”
এতে সারসংক্ষেপ করা হবে পুরো ধারাবাহিকের; কীভাবে ব্র্যান্ড ও তরুণের সম্পর্ক তৈরি হয়, ধরে রাখা যায়, এবং আগামী দিনের জন্য কী বার্তা রেখে যায়।