(সিরিজ: আয়নার পেছনে নারীরা – জমিদারবাড়ির গোপন সংসার)
আমিরুল মোমেনিন
জমিদারবাড়ির নারীজীবন মানেই কি শুধু কামনা, প্রেম, প্রতীক্ষা? না। এই আয়নার পেছনে আরও এক দৃঢ় প্রতিচ্ছবি রয়েছে—যেখানে নারীরা শুধু সঙ্গিনী ছিলেন না, বরং ক্ষমতার দাবিদারও। ঠাকুরঝিদের অনেকে সন্তানের মা হয়েও সন্তুষ্ট ছিলেন না, তারা চেয়েছিলেন তাদের রক্ত-সম্পর্কিত সন্তান যেন পায় সম্পত্তি, পায় জমিদারির মসনদ।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে জমিদারি ছিল মূলত পুরুষ উত্তরাধিকারভিত্তিক। কিন্তু অনেক ঠাকুরঝি, যাঁরা জমিদার স্বামীর প্রিয় ছিলেন কিংবা সন্তানের মা, তাঁরা চেষ্টা করতেন তাঁদের সন্তান যেন হয় ঘোষিত উত্তরাধিকারী। সেই চেষ্টায় কখনো থাকত চক্রান্ত, কখনো প্রলোভন, কখনো বা এক নারীর সঙ্গে অন্য নারীর নিঃশব্দ যুদ্ধ।
সেইসব যুদ্ধ ছিল হীরার চুড়ির নিচে লুকানো বিষের মতো। বড়বউয়ের ঘরে খাওয়ার থালায় কে আগে পড়বে, সন্তানের দীক্ষা কোন ব্রাহ্মণের কাছে হবে, কে পাবে পারিবারিক তাবিজ—সব ছিল এক অদৃশ্য দখলের কৌশল। একবার নাকি একটি জমিদার পরিবারে দ্বিতীয় স্ত্রী তার সন্তানকে বৈধ উত্তরাধিকারী প্রমাণ করতে গিয়ে প্রথম স্ত্রীর ছেলেকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন কলিকাতা পাঠশালায়—যাতে সে দূরে থাকে, বাড়িতে তাকে মনে না পড়ে।
এখানে নারী কেবল সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র ছিলেন না, বরং কৌশলী এক পরিকল্পক। তাঁর কাছে মাতৃত্ব মানে শুধু স্নেহ নয়, ছিল ভবিষ্যতের পরিকল্পনা। দাসীরা পর্যন্ত জানত কোন সন্তান কার, কে প্রিয়পাত্র, কে একদিন হবে কাগজে-কলমে জমিদার।
কিন্তু এই ছায়া-রাজনীতির শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকত ব্যর্থতা। অনেক নারী পুত্র জন্ম দিয়েও দেখেছেন, জমিদার তার প্রতি অনুগত নয়, অন্য নারীর ছেলেকে উত্তরাধিকারী করেছে। তখন সেই মায়েরা হত ভগ্ন হৃদয়ের রক্তাক্ত প্রতিমা। কেউ কালীমন্দিরে বসে যেতেন নীরবে, কেউ দাসীর ঘরে চুপি চুপি কাঁদতেন।
এই পর্ব আমাদের দেখাল নারী শুধু ভালোবাসা বা শরীরের ভিক্ষুক ছিলেন না, বরং ছিলেন সামাজিক ক্ষমতার দাবিদার।
পরবর্তী পর্বে জানব—“শেষ পর্ব: নপুংসক প্রহরী ও হেরেমের নিরাপত্তা”, যেখানে হেরেম ও অন্দরমহলের গোপন পাহারাদারদের জীবন উন্মোচিত হবে।
👉 “অন্দরমহলের নারীরা শুধু পর্দার পেছনের চরিত্র নয়, তারা ছিল রাজনীতির অভ্যন্তরীণ কারিগর। সেইসব অনুচ্চারিত ইতিহাস জানতে চোখ রাখুন BusinessToday24.com-এ।”