Home Second Lead শাবি : বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতায় সর্বনাশ, মামলা ৫ জনের বিরুদ্ধে

শাবি : বন্ধুর বিশ্বাসঘাতকতায় সর্বনাশ, মামলা ৫ জনের বিরুদ্ধে

ধর্ষণে অভিযুক্ত শান্ত ও স্বাগত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থীকে অচেতন করে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের মতো লোমহর্ষক ঘটনার পর দুই ঘন্টার মধ্যে মূল অভিযুক্তদের আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। মামলা হয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারায়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়,  সুরমা আবাসিক এলাকার একটি ভাড়াবাড়িতে ডেকে নিয়ে ওই ছাত্রীকে অচেতন করে ধর্ষণ করে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু শান্ত তারা আদনান ও স্বাগত দাস পার্থ। আরও ২ থেকে ৩ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি এতে জড়িত ছিল বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। শুধু ধর্ষণই নয়, অভিযুক্তরা ভিডিও ধারণ করে এবং তা অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে দীর্ঘ সময় বিষয়টি গোপন রাখতে বাধ্য করে ভুক্তভোগীকে।

মামলা, ভুক্তভোগী ও অন্য শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগে রিকাবীবাজারে একটি কনসার্টে যাওয়ার আগে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ফাঁদে ফেলে অচেতন করে সুরমা আবাসিক এলাকার একটি মেসে নিয়ে যান শান্ত ও স্বাগত। পরে রাতভর তাকে নির্যাতন এবং ভিডিও ধারণ করেন।

আটককৃতদের মধ্যে শান্ত তারা আদনান নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী । সে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনায় মামলার আসামি। এছাড়াও সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি, ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলাসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পরপরই প্রশাসন তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়। ডিজিটাল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে দুই অভিযুক্তকে শনাক্ত করে একজনকে ক্যাম্পাস থেকে এবং অপরজনকে সুরমা আবাসিক এলাকা থেকে আটক করা হয়। পুলিশ ও প্রশাসনের যৌথ জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ইসমাঈল হোসেন বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যেই অভিযুক্তদের শনাক্ত করে প্রক্টর অফিসে হাজির করা হয়েছে। আমরা কোনোভাবেই এই ঘটনার দায় এড়াতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বোচ্চ সহায়তা করছে, যাতে ভুক্তভোগী ন্যায়বিচার পায়।”

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, “প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্তদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ চলমান।”

ভুক্তভোগী ছাত্রীর সহপাঠীরা জানান, “বন্ধু হিসেবে বিশ্বাস করেছিল সে। সেই বিশ্বাসকে পুঁজি করেই পরিকল্পিতভাবে সর্বনাশ করেছে তারা। এখন দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে আমাদের কেউ আর নিরাপদ নয়।”

ধর্ষণের প্রতিবাদে শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল।

এ ঘটনায় ক্যাম্পাসজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার পর্যন্ত একাধিকবার বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষার্থীরা ধর্ষকদের স্থায়ী বহিষ্কার ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান।

মামলায় শান্ত তারা আদনানকে ১ নম্বর এবং স্বাগত দাস পার্থকে ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে। বাকি আসামিদের পরিচয় এখনো নিশ্চিত নয়। তদন্তসাপেক্ষে শিগগির তাদের শনাক্ত করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে আরেকটি নির্মম কলঙ্কের দাগ হয়ে রইল এই ঘটনা। প্রশাসনের অঙ্গীকার থাকলেও, শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন—এই বার কি শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার মিলবে?