Home আন্তর্জাতিক হরমুজের শঙ্কায় বিশ্বজুড়ে জ্বালানি বাজারে আগুন

হরমুজের শঙ্কায় বিশ্বজুড়ে জ্বালানি বাজারে আগুন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় (ফোর্ডো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান) সরাসরি বোমা হামলা চালানোর পর বৈশ্বিক তেলবাজারে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু সাময়িক প্রতিক্রিয়া নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন ও ভোক্তা বাজারে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

তেলের দামে তাৎক্ষণিক লাফ:

হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ৭ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। ব্রেন্ট ক্রুডের দাম এক লাফে ৭৭ ডলারে পৌঁছায়, যা বিগত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। কিছু কিছু ফিউচার চুক্তিতে দাম সাময়িকভাবে ৮০ ডলারের কাছাকাছি চলে যায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি হরমুজ প্রণালীতে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে বা ইরান সমুদ্রপথে হস্তক্ষেপ করে, তবে তেলের দাম ১০০ থেকে ১৩০ ডলার পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাজনিত কারণে ট্যাংকার কোম্পানিগুলো বীমা খরচ বাড়িয়েছে এবং অনেক সংস্থা বিকল্প রুট ভাবতে শুরু করেছে।

শিল্প খাতে উদ্বেগ ও ব্যয়বৃদ্ধি:

বিশ্বের অধিকাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান—বিশেষ করে রসায়ন, নির্মাণ, গার্মেন্টস ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্প—প্রচুর পরিমাণে জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি তাদের উৎপাদন ব্যয় বাড়াবে। একই সঙ্গে পণ্য পরিবহনের খরচও বাড়বে, ফলে ভোক্তামূল্য বাড়ার আশঙ্কা প্রবল।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, যারা বৈদেশিক বাজারে পণ্য রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তারা এই দামের প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভব করবে। শিল্প খাতে ব্যয় বৃদ্ধি মানেই কর্মসংস্থান ও উৎপাদন উভয় খাতে ঝুঁকি বাড়বে।

ভোক্তা পর্যায়ে প্রতিক্রিয়া ও মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি:

বিশ্বব্যাপী ভোক্তারা এমনিতেই উচ্চমূল্যের পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এই মুহূর্তে নতুন করে তেলের দাম বাড়লে পরিবহন খরচ ও বিদ্যুৎ খরচ আরও বাড়বে, যার প্রভাব সরাসরি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় পড়বে।

অস্ট্রেলিয়ায় ইতোমধ্যে প্রতি লিটারে জ্বালানির দাম ১২ সেন্ট বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে অক্সফোর্ড ইকোনমিক্স আশঙ্কা করছে, যদি তেলের দাম ১২০ ডলার ছাড়ায়, তবে দেশটির বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি ৬ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। বাংলাদেশে এই ধাক্কা সরাসরি আমদানি ব্যয় এবং সরকারি ভর্তুকির চাপ বাড়িয়ে তুলবে।

বিনিয়োগ বাজারে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ:

বিশ্বের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা এখন নিরাপদ খাত—যেমন সোনা, মার্কিন ডলার ও সরকারি বন্ড—নিয়ে ভাবছে। ঝুঁকিপূর্ণ খাত যেমন এয়ারলাইন্স, পর্যটন, আমদানি নির্ভর শিল্প এখন চাপে। এদিকে জ্বালানিভিত্তিক কোম্পানি ও প্রতিরক্ষা শিল্পের শেয়ারে উল্টো চাঙ্গাভাব দেখা যাচ্ছে।

সামনের দিনগুলোতে কী ঘটতে পারে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি এই হামলা ‘এককালীন’ হয় এবং কূটনৈতিক সমাধান হয়, তবে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল হবে। কিন্তু ইরান যদি পাল্টা জবাব দেয় এবং হরমুজ প্রণালীতে বাস্তব বাধা সৃষ্টি করে, তবে এটি পুরো বিশ্ব জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় চরম অস্থিরতা তৈরি করবে।

অতএব, আগাম সতর্কতা না নিলে বাংলাদেশের মতো আমদানি নির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।