বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হলো ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিশাল মহাসমাবেশ। সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এ সমাবেশে দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলা থেকে আসা হাজারো নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। মূল অধিবেশন শুরু হয় দুপুর ২টায়, যেখানে সভাপতিত্ব করেন দলটির আমির মুফতী রেজাউল করীম, যিনি চরমোনাই পীর নামেই সমধিক পরিচিত।
সমাবেশে দলটির মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান ‘মহাসমাবেশের ঘোষণাপত্র’ পাঠ করেন। এতে রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামি মূল্যবোধ, নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার, দুর্নীতি ও স্বৈরতন্ত্রের অবসান, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে ১৬ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
ঘোষণাপত্রে জুলাই মাসকে “গণঅভ্যুত্থানের মাস” হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়, এটি শুধু একটি রাজনৈতিক প্রস্তাবনা নয়, বরং আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি গৌরবময় মাইলফলক হয়ে থাকবে। দলটি মনে করে, বর্তমানে দেশে যে স্বৈরতান্ত্রিক ও দলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে, তা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে মূল রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেই সংস্কার আনতে হবে।
ঘোষিত ১৬ দফা দাবির মূল দিকনির্দেশনা
দাবিগুলোর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিরূপে পুনঃস্থাপনের দাবি। দলটি মনে করে, ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার মাধ্যমে নৈতিকতা ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ও নির্বাচনী ব্যবস্থায় ফ্যাসিবাদী প্রভাবমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি তুলে ধরা হয়েছে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে ছোট দলগুলোও প্রতিনিধি পাঠাতে পারবে, ফলে জনগণের প্রকৃত মতামত সংসদে প্রতিফলিত হবে।
তারা জুলাই সনদের ভিত্তিতে একটি জাতীয় ঐকমত্য গঠনের প্রস্তাব দেয়, যেখানে সব রাজনৈতিক শক্তি মিলে শোষণমুক্ত রাষ্ট্র গঠনে এগিয়ে আসবে। একইসঙ্গে ভবিষ্যৎ স্বৈরাচার রোধে সাংবিধানিক সংস্কার ও প্রশাসনিক কাঠামোর আমূল পরিবর্তনের দাবি জানানো হয়।
একাধিক দাবি রয়েছে নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। এর মধ্যে রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই গ্রহণযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত এবং দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার দাবি
ঘোষণাপত্রে ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ এবং যেসব চুক্তিকে দলটি দেশের স্বার্থবিরোধী মনে করে তা বাতিল করার দাবি জানানো হয়। তারা মনে করে, দেশের স্বার্থরক্ষায় স্বচ্ছ ও সমানাধিকারের ভিত্তিতে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনা জরুরি।
অন্যদিকে, পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি রোধে প্রশাসনের সক্রিয় ভূমিকা, এবং ঘুষ ও রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা বন্ধ করার বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়।
দলটি ইসলাম ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ববিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দেয়। একই সঙ্গে দুর্নীতিবাজ ও অপরাধীদের প্রতিহত করতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
সবশেষে দলটি রাষ্ট্রের সর্বস্তরে ইসলামের আলোকিত আদর্শ বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে বলে, ইসলাম কোনো দমননীতি নয়, বরং একটি কল্যাণমুখী আদর্শ; যা মানবিক, ন্যায়নিষ্ঠ ও জনবান্ধব রাষ্ট্র গঠনে সহায়ক।
জনসমুদ্র ও রাজনৈতিক বার্তা
মহাসমাবেশে অংশ নেওয়া ইসলামী আন্দোলনের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “আজকের এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে দেশের মানুষ আর চায় না দুঃশাসন। তারা চায় এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা, যেখানে জনগণের অধিকার নিশ্চিত হবে এবং ইসলামি মূল্যবোধের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা কোনো দল নয়, বরং একটি আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করছি। এই আদর্শ গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।”
এই মহাসমাবেশ ইসলামী আন্দোলনের রাজনৈতিক শক্তিমত্তার একটি বড় প্রদর্শন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে একটি ইসলামী দল হিসেবে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ব্যাপক সংস্কার ও নির্বাচনব্যবস্থার রূপান্তর নিয়ে তারা যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছে, তা আগামীর রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে।
📢 আপনার মতামত কী?
চরমোনাই পীরের নেতৃত্বে উত্থাপিত ১৬ দফা দাবিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
✅ রাষ্ট্র সংস্কারে এই দাবিগুলো কতটা বাস্তবসম্মত?
✍️ নিচে মন্তব্য করুন এবং আপনার বন্ধুদের সঙ্গে এই প্রতিবেদনটি শেয়ার করুন।
🔁 শেয়ার করুন এই প্রতিবেদন, জানুন মানুষ কী বলছে ইসলামী আন্দোলনের এই দাবিসমূহ নিয়ে।
👍 লাইক দিন বিজনেসটুডে২৪.কম–এর ফেসবুক পেজে এবং পেতে থাকুন সর্বশেষ রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও মাঠের খবর।
📲 আপনার মতামত আমাদের জানাতে ভুলবেন না!