Home ইতিহাস ও ঐতিহ্য বর্ষার ঢল আর দেশি মাছের টানে জমে উঠেছে ‘চাই’-এর হাট

বর্ষার ঢল আর দেশি মাছের টানে জমে উঠেছে ‘চাই’-এর হাট

সংগৃহীত ছবি

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, পিরোজপুর: বর্ষার প্রথম ফোঁটা বৃষ্টি যেন শুধু প্রকৃতিকে নয়, জাগিয়ে তোলে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শত শত গ্রামীণ পরিবারকে। খাল-বিল, নদ-নদীতে যখন দেশি মাছের ঢল নামে, তখন শ্রীরামকাঠী ও দিঘিরজান বাজারে বসে এক অনন্য হাট মাছ ধরার যন্ত্র ‘চাই’ ও ‘দুয়ারি’-র জমজমাট বাজার। এই হাট ঘিরেই গড়ে উঠেছে একটি মৌসুমি লোকজ শিল্প।

শুধু মাছ ধরা নয়, চাই তৈরির পেছনেও লুকিয়ে আছে কুশল হাতের শিল্প আর এক টুকরো জীবনের গল্প। বাঁশের তৈরি এই ‘চাই’ দেখতে সরু নলাকৃতির, যার ভেতরে মাছ প্রবেশ করে কিন্তু আর বের হতে পারে না। তল্লা ও কালিজিরা জাতের বাঁশ চাই তৈরির মূল উপাদান। একটি বাঁশ দিয়ে সাত-আটটি চাই তৈরি করা গেলেও একজন কারিগরের দিনে ছয়টির বেশি তৈরি সম্ভব নয়।

শ্রীরামকাঠী বাজারে প্রতি রবিবার ও বুধবার, আর দিঘিরজান বাজারে মঙ্গলবার ও শনিবার বসে এই যন্ত্রপাতির হাট। প্রতিটি হাটে হাজার হাজার চাই বিক্রি হয়। পাইকারি দামে এক কুড়ি চাই বিক্রি হয় তিন থেকে চার হাজার টাকায়, আর খুচরা দামে প্রতিটি চাই ১৩০ থেকে ১৬০ টাকার মধ্যে।

এই হাট ঘিরেই জীবিকার পথ খুঁজে পান বহু পরিবার। সুদেব ঘরামী নামের এক অভিজ্ঞ কারিগর বললেন, “চাই বানাতে খরচ বেশি, কষ্টও কম না। দাম যা পাই, তাতে তেমন লাভ থাকে না। তবু নদীর প্রতি টান আছে বলেই এখনও করে যাচ্ছি।”

কিন্তু শিল্পটি টিকে থাকা নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। দেশের নদী-খাল শুকিয়ে যাওয়া, দেশি মাছের প্রাচুর্য কমে যাওয়া, এবং বাঁশের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেকেই এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ কেউ শহরমুখী হয়েছেন, কেউ হয়েছেন দিনমজুর।

তবে অনেকে এখনও আশা হারাননি। তাঁদের মতে, সরকার যদি স্বল্পসুদে ঋণ সহায়তা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে, তাহলে এই লোকজ শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। কারিগরদের সেই দাবিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসনও।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, মে থেকে জুলাই পর্যন্ত দেশি মাছের প্রজননকাল। এ সময় মা মাছ ধরা নিষিদ্ধ। তাই মাছ শিকারীদের প্রশিক্ষণ, সচেতনতা এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সচেতন করা হচ্ছে যেন নিষিদ্ধ যন্ত্রের ব্যবহার না হয়।

লোকজ জীবনের সঙ্গে জড়িত এই চাই নির্মাণশিল্প শুধু একটি জীবিকা নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। বর্ষা যতই আসুক, নদীর বুক যতই সজীব হোক, এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে না পারলে হারিয়ে যাবে এক অনন্য গল্প।

🔍 লোকজ শিল্পের এই গল্পটি আপনার ভালো লেগেছে? শেয়ার করুন প্রিয়জনের সঙ্গে!
👇 নিচে কমেন্ট করে জানান, আপনার এলাকায় এখনও কি ‘চাই’ বানানো হয়?
📢 শেয়ার করুন প্রতিবেদনটি—লোকজ ঐতিহ্য টিকে থাকুক আমাদের সকলের ভালোবাসায়।
📲 আরও এমন গল্প পেতে চোখ রাখুন বিজনেসটুডে২৪.কম-এ।