হেলথ ডেস্ক: একসময় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করতেন চর্বি মানেই হৃদরোগের ঝুঁকি। কিন্তু আধুনিক গবেষণা বলছে, সব চর্বি সমান নয়। বরং কিছু চর্বি শরীরের জন্য অপরিহার্য এবং নির্দিষ্ট পরিমাণে গ্রহণ করলে তা হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারীও হতে পারে।
লন্ডনের ওয়েলিংটন হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট ড. অলিভার গাটম্যান বলেন, “সব চর্বি হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর নয়। বরং কিছু চর্বি শরীরের কোষঝিল্লি তৈরিতে, হরমোন উৎপাদনে ও স্নায়ু সুরক্ষায় অপরিহার্য।” পুষ্টিবিদ স্টেফানি মুর বলেন, “আমাদের মস্তিষ্ক, কোষ, স্নায়ুর আবরণ—সবই চর্বির ওপর নির্ভরশীল।”
হৃদয়ের জন্য উপকারী কিছু চর্বিযুক্ত খাবার
ডিম
ডিমে রয়েছে প্রোটিন, ফসফোলিপিডস ও প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। আগের ধারণা ছিল ডিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে, কিন্তু গবেষণা বলছে, দিনে দুইটি ডিম খাওয়া নিরাপদ। ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ৬টি ডিম খাওয়া হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
ঘাস খাওয়া গরুর মাংস
ঘাস খাওয়া গরুর মাংসে থাকে ওমেগা-৩, ভিটামিন এ, ডি, ও কে। এটি পেশি গঠনে সাহায্য করে, যা বিপাক হার বাড়িয়ে হৃদযন্ত্রের ওপর চাপ কমায়। তবে পরিমাণে সংযম জরুরি।
পনির
উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকলেও কিছু পনির হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। যেমন এমমেন্টাল ও জার্লসবুর্গ পনিরে রয়েছে ভিটামিন কে-টু, যা রক্তচাপ ও হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী।
অলিভ অয়েল
ঠাণ্ডা চাপা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল—মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটে সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও পলিফেনল, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ ও প্রদাহ হ্রাসে সাহায্য করে।
স্যালমন বা চর্বিযুক্ত মাছ
স্যালমন, ম্যাকেরেল, সারডিন, হেরিং ইত্যাদি মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ, যা রক্তপ্রবাহ বাড়ায় ও হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। সপ্তাহে দুবার ১০০ গ্রাম করে খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
জলপাই
জলপাইয়ে রয়েছে ফাইবার, ওলেইক অ্যাসিড ও কোয়ারসেটিন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হৃদয়ের জন্য উপকারী। যদিও এতে লবণ থাকে, তবে প্রাকৃতিকভাবে হওয়ায় তা তেমন ক্ষতিকর নয়।
বাদাম
আখরোট, আমন্ড, পেকান—সবগুলোতেই রয়েছে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন ও পলিফেনল। আখরোটে থাকে ওমেগা-৩, আমন্ডে ভিটামিন ই, যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তবে রোজ এক মুঠোর বেশি না খাওয়াই ভালো।
দৈনিক চর্বির গ্রহণমাত্রা কত হওয়া উচিত?
স্টেফানি মুর বলেন, “একেকজনের বয়স, কার্যকলাপ ও স্বাস্থ্যভেদে এই পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে। গড়পড়তা হিসাবে দৈনিক ২০–৩০ শতাংশ ক্যালরি চর্বি থেকে আসা উচিত।”
এনএইচএস-এর সুপারিশ অনুযায়ী, পুরুষদের দিনে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ৩০ গ্রাম ও নারীদের ২০ গ্রাম পার না হওয়াই ভালো।
চর্বির ধরন তিনটি
১. স্যাচুরেটেড ফ্যাট – মাংস, দুগ্ধজাত পণ্য
২. মোনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট – অলিভ অয়েল, বাদাম, অ্যাভোকাডো
৩. পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট – মাছ, সূর্যমুখীর তেল
সঠিক পরিমাণ ও উপযুক্ত উৎস থেকে ফ্যাট গ্রহণ করলে তা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।