Home Third Lead চিলমারী নদীবন্দর: সম্ভাবনার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা এক জনপদ

চিলমারী নদীবন্দর: সম্ভাবনার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা এক জনপদ

ধারাবাহিক প্রতিবেদন: উত্তরের জীবনরেখা – কুড়িগ্রামকে জানুন কাছ থেকে
বিশেষ পর্ব: 

নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম: বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষা কুড়িগ্রামের চিলমারী এক সময় ছিল উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র। ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা এই নদীবন্দর ছিল ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাণিজ্য, পরিবহন ও রাজনৈতিক গতিপ্রবাহে এর ভূমিকা ছিল উজ্জ্বল। কিন্তু স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে ক্রমে পিছু হটেছে বন্দরচর্চা, কমেছে জাহাজ চলাচল, আর থমকে গেছে উন্নয়নের গতি।
ইতিহাসে চিলমারীর গুরুত্ব

ব্রিটিশ আমলে চিলমারী নদীবন্দর ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ রেজিস্টার্ড রিভার পোর্ট। ব্রহ্মপুত্র দিয়ে কলকাতা পর্যন্ত পণ্য ও যাত্রী পরিবহন হতো এখান থেকে। স্বাধীনতা-পূর্ব সময়ে এই বন্দরের মাধ্যমে তেল, পাট, চালসহ নানান পণ্য যেত দেশের বিভিন্ন অংশে, এমনকি ভারতে।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় চিলমারী বন্দর ছিল মুক্তাঞ্চলের প্রবেশদ্বার। এখান থেকেই চালানো হয় ঐতিহাসিক “চিলমারী অভিযানে”। কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে নদীর নাব্যতা হ্রাস, অব্যবস্থাপনা ও রাজনৈতিক অগ্রাধিকারের অভাবে এই বন্দর কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

বর্তমান অবস্থা ও সরকারি উদ্যোগ

২০২০ সালে চিলমারী বন্দরের উন্নয়নে ২৩৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। এই প্রকল্পের আওতায় একটি টার্মিনাল ভবন, জেটি, ওয়্যারহাউজ, ড্রেজিং ও সংযোগ সড়ক নির্মাণের কথা ছিল। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর বাস্তবায়ন করছে।

২০২৫ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো অনেক অংশ অসম্পূর্ণ। এখনো জেটি নির্মাণ পুরোপুরি শেষ হয়নি, নিয়মিত পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়নি।

স্থানীয়দের প্রত্যাশা ও উদ্বেগ

চিলমারীর বাসিন্দারা বলছেন, তারা বন্দরের পূর্ণাঙ্গ কার্যকারিতা চান—যেখানে পণ্য আসবে, কর্মসংস্থান হবে, যোগাযোগ বাড়বে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল লতিফ বলেন, “বন্দর থাকলে কুড়িগ্রামে শিল্প-কারখানাও হতে পারত। কিন্তু এখনও আমরা শুধু সম্ভাবনার কথাই শুনে যাচ্ছি।”

অন্যদিকে, নদীশাসন না থাকায় ব্রহ্মপুত্রের নাব্যতা এখনো বড় প্রতিবন্ধক। বর্ষাকালে পানি বাড়লেও শুষ্ক মৌসুমে বড় নৌযান চলাচল সম্ভব নয়।

সম্ভাবনার দ্বার এখনও অর্ধেক খোলা

চিলমারী নদীবন্দর শুধু কুড়িগ্রামের নয়, গোটা উত্তরাঞ্চলের বাণিজ্য ও সংযোগ পুনর্জাগরণের একটি চাবিকাঠি হতে পারে। প্রয়োজন নদীশাসন, আধুনিক অবকাঠামো এবং আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যে কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতা।

সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়ানো, স্থানীয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করলেই চিলমারী আবার ফিরতে পারে তার ঐতিহাসিক ভূমিকায়।

📢 এই প্রতিবেদন ভালো লাগলে লাইক দিন, শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করে জানান—আপনি কুড়িগ্রামের এই সম্ভাবনাময় বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী ভাবছেন।