Home First Lead এনবিআর-এর দুই সদস্যসহ চার শীর্ষ কর্মকর্তা অবসরে

এনবিআর-এর দুই সদস্যসহ চার শীর্ষ কর্মকর্তা অবসরে

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের জেরে চারজন শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাকে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত এসেছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতৃত্বে দুই দিনব্যাপী সারাদেশজুড়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির পর।

বুধবার বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে পৃথক দুটি সরকারি আদেশে এনবিআরের সদস্য মো. আলমগীর হোসেন এবং কর কমিশনার মো. শব্বির আহমেদকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হয়। বরিশাল কর অঞ্চলের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন শব্বির আহমেদ।

অপরদিকে, একই আদেশে এনবিআরের শুল্কনীতির সদস্য হোসেন আহমদ এবং মূসকনীতির সদস্য ড. আব্দুর রউফকেও অবসরে পাঠানো হয়েছে। সরকারি চাকরি আইন দুই হাজার আঠারোর পঁইত্রিশ নম্বর ধারার ক্ষমতাবলে জনস্বার্থে এই চার কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হয়েছে। আদেশে উল্লেখ করা হয়, তাদের চাকরিজীবনের পঁচিশ বছর পূর্ণ হওয়ায় বিধি অনুযায়ী তারা অবসরজনিত সব সুবিধা পাবেন।

এনবিআরের একাধিক কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত ২৮ ও ২৯ জুন সারাদেশে শুল্ক ও আয়কর কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি, দপ্তর বন্ধ ও আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রাখার জেরে সরকার এই কঠোর অবস্থান নিয়েছে। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের এই কর্মসূচিতে রাজস্ব বিভাগে বড় ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয়।

এই পটভূমিতেই মঙ্গলবার গভীর রাতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. জাকির হোসেনকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেওয়া হয়। আদেশে বলা হয়, সরকারের দপ্তর খোলা রাখার স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তিনি তা অমান্য করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস বন্ধ রাখেন, ফলে দেশের সবচেয়ে বড় কাস্টমস দপ্তরে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এবং সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হয়। তাকে তদন্তের স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকালীন সময়ে তিনি বিধি অনুসারে খোরপোষ ভাতা পাবেন।

আজ সকালে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে নতুন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন চট্টগ্রামের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন।

এদিকে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে পরিচালিত কর্মসূচির প্রভাব এখনও রাজস্ব প্রশাসনে স্পষ্ট। রাজস্ব কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যৌক্তিক সংস্কার, কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, দক্ষতা উন্নয়ন ও পদোন্নতির স্বচ্ছ প্রক্রিয়াসহ একাধিক দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেই সরকার এনবিআরের সব চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা হিসেবে ঘোষণা করে। ফলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ধর্মঘট বা কর্মবিরতির পথ রুদ্ধ করার লক্ষ্যে আইনি ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, দুর্নীতি দমন কমিশনও বর্তমানে এনবিআরের ১১ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন এনবিআরের দুই সদস্য এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার। এনবিআরের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা, শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং সম্ভাব্য দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে এই তদন্ত আরও বিস্তৃত হওয়ার আভাস মিলছে।

সব মিলিয়ে রাজস্ব খাতে এই মুহূর্তে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর এবং নিয়ন্ত্রণমূলক। কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনস্বার্থে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে ভেতরে ভেতরে এনবিআরের বিভিন্ন স্তরে ক্ষোভ, অসন্তোষ ও অনাস্থা জমা হচ্ছে বলেও অনেকে মনে করছেন।