Home স্বাস্থ্য পিরিয়ড নিয়ে এখনও ট্যাবু: স্কুলে-ক্যাম্পাসে মেয়েদের লড়াই

পিরিয়ড নিয়ে এখনও ট্যাবু: স্কুলে-ক্যাম্পাসে মেয়েদের লড়াই

হেলথ ডেস্ক: ক্লাস সেভেনের মেয়ে সুমাইয়ার শরীর হঠাৎ ভিন্ন আচরণ করতে শুরু করে। পেট ব্যথা, মাথা ঘোরা আর গা গুলিয়ে ওঠা মনে হচ্ছিল অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কিন্তু যখন ইউনিফর্মের নিচ দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করল, তখন ভয় ও লজ্জায় চুপ হয়ে গিয়েছিল। স্কুলে কাউকে কিছু বলতেও পারেনি। সহপাঠী কেউ জানত না, এমনকি টিচারদের কাছেও এই বিষয়টি বলা যায় না এটাই যেন অলিখিত নিয়ম।

এটা শুধু সুমাইয়ার গল্প নয়। দেশের হাজারো স্কুলে, কলেজে এমন অসংখ্য কিশোরী প্রতিদিন এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে, যেখানে তাদের প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ভয়, লজ্জা আর অন্ধকার।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই স্যানিটারি ব্যবস্থা

শহরাঞ্চলের কিছু স্কুলে এখন হয়তো ১-২টি টয়লেটে প্যাড রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা সামান্যই। বেশিরভাগ স্কুলেই নেই প্যাড রাখার ব্যবস্থা, ইনসিনারেটর (প্যাড নষ্ট করার যন্ত্র), অথবা এমনকি পরিষ্কার ওয়াশরুম। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেয়েরা পিরিয়ড শুরু হলে ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যায়। ফলে তাদের শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সামাজিক সংকোচ ও তথ্যের অভাব

গ্রাম তো বটেই, শহরেও এখনো অনেক মা মেয়ের সঙ্গে খোলামেলা পিরিয়ড নিয়ে কথা বলেন না। ফলে মেয়েরা পিরিয়ড শুরু হলে ভয় পায়, ‘অসুস্থ’ ভেবে ওষুধ খেয়ে ফেলে বা কাউকে কিছু না জানিয়েই স্কুলে যেতে ভয় পায়। এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৪০ শতাংশ কিশোরী জানেই না পিরিয়ড কী বা কেন হয়।

পুরুষ শিক্ষকরা অনেক সময় বিব্রত হন, সাড়া দেন না

অনেক স্কুলেই নারী শিক্ষক না থাকায় ছাত্রীদের সমস্যা আরও জটিল হয়। পিরিয়ডজনিত সমস্যায় ভুগলেও তা বলতে পারেন না পুরুষ শিক্ষককে। শিক্ষকরা নিজেরাও বিষয়টি এড়িয়ে চলেন, কেউ কেউ বলেন, “এটা মেয়েদের ব্যাপার, আমি কী করব?” অথচ এই অজ্ঞানতা ও উদাসীনতা কিশোরীদের জন্য অপমানজনক পরিস্থিতি তৈরি করে।

স্বাস্থ্য ও আত্মবিশ্বাস—দুটিই ঝুঁকিতে

প্রথম কয়েক বছর কিশোরীদের দেহে নানা পরিবর্তন আসে, যার অন্যতম এই মাসিক চক্র। যদি তখন তারা স্বাস্থ্যকর ব্যবস্থাপনা, খাদ্যাভ্যাস ও বিশ্রামের সুযোগ না পায়, তবে পরবর্তী জীবনে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। সঙ্গে আসে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি, নিজেকে লুকিয়ে রাখার প্রবণতা।

সমাধান কোথায়?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্কুল পর্যায়ে বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য শিক্ষা ক্লাস থাকা দরকার, যেখানে মেয়েদের সঙ্গে ছেলেদেরও এই বিষয়ে সচেতন করা হবে। পিরিয়ড কোনো লজ্জার বিষয় নয়, এটি প্রকৃতির অংশ—এই বার্তা সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত ওয়াশরুম, স্যানিটারি ন্যাপকিন, ইনসিনারেটর থাকা উচিত।

📣 পাঠকের প্রতি আহ্বান
আপনার সন্তান, বোন, ছাত্রী বা সহকর্মী পিরিয়ডের সময় যেন অপমান বা সংকোচের শিকার না হয়—সে দায়িত্ব আপনারও। প্রতিবেদনটি মনে ধরলে লাইক করুন, শেয়ার করুন। সচেতনতা ছড়ান।