ফিচার প্রতিবেদন
হিমালয়ের কোলঘেঁষা শান্তিপ্রিয় দেশ ভুটান, যা সুখের সূচকে এগিয়ে থাকা ও পরিবেশবান্ধব নীতিমালার জন্য বিশ্বে প্রশংসিত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরেকটি ক্ষেত্রে দেশটি উদাহরণ হয়ে উঠেছে নারীর শিক্ষা। ভুটান প্রমাণ করেছে, নারীর শিক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ শুধু ব্যক্তিজীবন নয়, গোটা সমাজ ও রাষ্ট্র কাঠামো পাল্টে দিতে পারে।
ভুটানে গত এক দশকে নারীর সাক্ষরতার হার ৫২ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশে। শহরাঞ্চলে এই হার আরও বেশি। দেশটির সরকার ২০১৪ সালে ‘নারীর ক্ষমতায়নে শিক্ষা’ শীর্ষক একটি জাতীয় নীতি প্রণয়ন করে। এরপর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের স্কুলে ভর্তির হার এবং উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
ভুটানের শিক্ষানীতিতে রয়েছে কিছু ব্যতিক্রমী দিক। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। মেয়েদের জন্য বিশেষ বৃত্তি, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থার পাশাপাশি গ্রামীণ এলাকায় মায়েদের জন্য ‘মোবাইল স্কুল সাপোর্ট সিস্টেম’ চালু করা হয়েছে। এসব পদক্ষেপ নারীর শিক্ষার পথ সহজ করেছে।
এর ফলশ্রুতিও সুস্পষ্ট। বর্তমানে ভুটানে নারীদের অংশগ্রহণ রাষ্ট্রীয় প্রশাসন, আইন, স্বাস্থ্য, ব্যবসা ও শিক্ষাক্ষেত্রে দ্রুত বাড়ছে। ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে পার্লামেন্টে নারীদের অংশগ্রহণ ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ, যা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের চেয়ে বেশি। শহরাঞ্চলে নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা ২০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। গ্রামীণ এলাকাতেও নারী নেতৃত্বে গঠিত সমবায় ও ক্ষুদ্র শিল্প সংগঠন এখন দৃশ্যমান।
ভুটানের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে জেন্ডার সংবেদনশীলতা, প্রজনন স্বাস্থ্য ও নেতৃত্বমূলক পাঠ্যসূচি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে মেয়েরা শুধু লিখতে-পড়তে শিখছে না, তারা নিজের পছন্দ-অপছন্দ, অধিকার ও স্বপ্ন নিয়ে ভাবতেও শিখছে।
এখানে সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। আগে যেখানে মেয়েদের ছোটবেলায় বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো, এখন সেখানে পরিবারেরাও মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী হয়ে উঠছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নারীর শিক্ষা মানে শুধুই বইয়ের পাতা মুখস্থ নয়, বরং এটি স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, পরিবেশ এবং গণতন্ত্রের উন্নয়নের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। ভুটান দেখিয়েছে, নারীর ক্ষমতায়ন একটি দেশে মানবিক বিকাশের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হতে পারে।
বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের জন্য ভুটান একটি আদর্শ হতে পারে। সঠিক নীতিমালা, অবিচল রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সমাজের সহানুভূতিশীল অংশগ্রহণ থাকলে নারীর শিক্ষায় বিনিয়োগ সমাজের প্রতিটি স্তরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
এই প্রতিবেদন ভালো লেগে থাকলে লাইক দিন, শেয়ার করুন আপনার বন্ধুদের সঙ্গে, নারীর শিক্ষায় সচেতনতা ছড়াক সমাজে।