মসজিদকে মসজিদ হিসাবেই গণ্য রাখার নির্দেশ হাই কোর্টের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:মথুরার ঐতিহাসিক শাহী ইদগাহ মসজিদকে ‘বিতর্কিত সৌধ’ হিসেবে উল্লেখ করার আবেদন খারিজ করে দিয়েছে এলাহাবাদ হাই কোর্ট। হিন্দু পক্ষের এই আবেদন বাতিল করে বিচারপতি রাম মনোহর নারায়ণ মিশ্রের একক বেঞ্চ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমানে যেখানে ইবাদত পরিচালিত হচ্ছে এবং সামাজিক স্বীকৃতিতে সেটি মসজিদ হিসেবে বহাল রয়েছে, সেটিকে ‘বিতর্কিত সৌধ’ হিসেবে ঘোষণা করা যাবে না।
মথুরার এই ইদগাহ ঘিরে বহুদিন ধরেই চলছে বিতর্ক। শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমি সংলগ্ন এই মসজিদটি নিয়ে হিন্দু ও মুসলিম পক্ষের মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় টানাপড়েন। হিন্দু পক্ষের বক্তব্য, মসজিদটি এক সময়ের কেশবনাথ মন্দির ভেঙে তৈরি করা হয়। মুসলিম পক্ষের দাবি, বর্তমান বাস্তবতায় মসজিদ হিসেবে ইদগাহ ব্যবহৃত হয়ে আসছে দীর্ঘকাল ধরে, এবং এতে কোনও আইনি বা সামাজিক বিভ্রান্তি নেই।
সম্প্রতি হিন্দু পক্ষ আদালতে একটি আবেদন করে জানায়, সকল মামলার কাগজপত্রে শাহী ইদগাহ মসজিদকে ‘বিতর্কিত সৌধ’ হিসেবে উল্লেখ করতে হবে। তাদের দাবি ছিল, ভবিষ্যতে যাতে মসজিদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় এবং মামলার গতি সেভাবে নির্ধারিত হয়, সেজন্য এই পরিবর্তন জরুরি। তবে মুসলিম পক্ষ এর তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং লিখিত আপত্তি জমা দেয়। তারা স্পষ্ট করে জানায়, এটি মসজিদ, যেখানে নিয়মিত ইবাদত হয় এবং জনগণের কাছে এটি একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত।
এলাহাবাদ হাই কোর্ট মুসলিম পক্ষের যুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে জানায়, এমন কোনও স্থাপনার পরিচিতি বদলে দেওয়া যাবে না যার চারপাশে সামাজিক ও ধর্মীয় বাস্তবতা সুস্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত। আদালতের মতে, যদি কোনও পক্ষ ঐতিহাসিক তথ্য বা মালিকানার ভিত্তিতে দাবি করতে চায়, তা করতে হবে পৃথক মামলার মাধ্যমে, কিন্তু বর্তমানে ইবাদতের জায়গাকে ‘বিতর্কিত’ ঘোষণার একতরফা দাবিকে আইন মেনে নেওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে একটি চুক্তির মাধ্যমে জমির মালিকানা হিন্দু পক্ষের হাতে থাকলেও, ইদগাহ মসজিদ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় মুসলিম পক্ষকে। সেই থেকে স্থানটি মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। হাই কোর্টের সাম্প্রতিক এই রায় মথুরা সংক্রান্ত বিতর্কে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উন্মোচন করল বলে মত বিশ্লেষকদের।