Home সারাদেশ গর্ভাবস্থায় অবহেলা: প্রসবজনিত মৃত্যুর দায় কার?

গর্ভাবস্থায় অবহেলা: প্রসবজনিত মৃত্যুর দায় কার?

ছবি: এআই
হেলথ ডেস্ক: রাজশাহীর দূরবর্তী এক গ্রামে গর্ভাবস্থায় হেমার রক্তপাত শুরু হয়। স্বামী বাইসাইকেলে করে তাকে নিয়ে যান ১২ কিলোমিটার দূরের উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। কিন্তু সেখানে পৌঁছতে পৌঁছতে রক্তপাত বেড়ে যায়, আর হাসপাতালে পৌঁছেও চিকিৎসক ছিলেন না। সেদিন সেই কক্ষে শুধু হেমার কান্না আর এক নিস্তব্ধ মৃত্যু ছিল।

বাংলাদেশে এখনও প্রতিবছর কয়েক হাজার নারী গর্ভকালীন জটিলতা ও প্রসবকালীন অবহেলায় মারা যান। অনেক ক্ষেত্রেই এ মৃত্যু ছিল প্রতিরোধযোগ্য, যদি সময়মতো চিকিৎসা, পরিবহন এবং স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থাকত।

জাতীয় পরিসংখ্যানে উদ্বেগ

সরকারি তথ্য বলছে, দেশে প্রতি লাখ জীবিত প্রসবে এখনো প্রায় ১৬৯ জন নারী মারা যান। যদিও গত দুই দশকে এই হার অনেকটা কমেছে, তবু এই সংখ্যাকে এখনো বিপজ্জনক বলা হচ্ছে। ইউনিসেফের মতে, বাংলাদেশের প্রতিদিন গড়ে ৫ জন নারী মাতৃত্বজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।

দারিদ্র্য বড় বাধা

একটি ধাত্রী সেবা নিতেই অনেক নারীকে পাড়ি দিতে হয় ৮-১০ কিলোমিটার। সেই সঙ্গে আসে অর্থাভাবে সময়মতো গাড়ি না পাওয়া, টাকায় হাসপাতালের ওষুধ না কেনা, এমনকি নারীদের পরিবারের পুরুষ সদস্যদের অবহেলা—সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ দারিদ্র্যচক্রে আটকে পড়ে এই সেবা।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অবকাঠামো ও জনবলের সংকট

গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর অনেকগুলিতে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসক থাকেন না। নার্স বা মিডওয়াইফ থাকলেও অনেকে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ পাননি। কোথাও কোথাও প্রসবের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই, বিদ্যুৎ নেই, অক্সিজেন বা রক্ত মজুত থাকে না।

মানসিকতা ও সচেতনতার ঘাটতি

অনেক পরিবার গর্ভবতী নারীকে এখনো বাড়িতে রেখেই সন্তান প্রসবের চেষ্টা করেন। আধুনিক চিকিৎসার গুরুত্ব অনেক পরিবার বুঝে না বা ভয়ের কারণে নেয় না। মেয়েদের ছোটবেলা থেকে অপুষ্টিতে বেড়ে ওঠাও প্রসবকালীন জটিলতার আরেক কারণ।

উপায় কী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে আরও প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফ নিয়োগ, সহজলভ্য রেফারাল সেবা, এবং প্রতিটি প্রসূতিকে অন্তত চারবার চেকআপ নিশ্চিত করা জরুরি। পাশাপাশি দরকার গণসচেতনতা, যেখানে পিতা, স্বামী এবং পরিবারের পুরুষ সদস্যদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে।

📣 পাঠকের প্রতি আহ্বান

আপনার এলাকাতেও যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, জানাতে পারেন আমাদের। প্রতিবেদনটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে শেয়ার করুন, কমেন্ট করুন।