আনোয়ার আহমেদ, কুয়ালালামপুর ( মালয়েশিয়া): কুয়ালালামপুর শহরের বুকজোড়া গর্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্ববিখ্যাত পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার। ৮৮ তলা বিশিষ্ট এই আকাশচুম্বী স্থাপনা শুধু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কীর্তি নয়, এটি মালয়েশিয়ার আধুনিকতা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক।
১৯৯৮ সালে নির্মিত টাওয়ার দুটি একসময় বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবনের মর্যাদা পেয়েছিল। আজও বিশ্বের সর্বোচ্চ যুগল টাওয়ার হিসেবে গর্বের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিটি টাওয়ারের উচ্চতা ৪৫২ মিটার, যা প্রায় ৮৮ তলার সমান।
পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের নকশায় মালয়েশিয়ার ইসলামি ঐতিহ্য ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। আর্কিটেকচারাল ডিজাইনটি করেছেন আর্জেন্টাইন স্থপতি সিজার পেল্লি। ইসলামী জ্যামিতিক শিল্পশৈলীর ছাপ স্পষ্ট ভবনের প্রতিটি স্তরে, প্রতিটি কোণে।
দুটি টাওয়ারের মাঝে ৪১ ও ৪২ তলায় রয়েছে স্টিল ও কাঁচের তৈরি স্কাইব্রিজ, যা ভবন দুটির সংযোগকারী সেতু। এটি শুধু পর্যটকদের জন্য দর্শনীয় স্থান নয়, বরং জরুরি সময়ে ভবনের এক অংশ থেকে অন্য অংশে স্থানান্তরের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে।
পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার কেবল একটি অফিস ভবন নয়। এতে রয়েছে একটি বড় শপিং মল ‘সুরিয়া কেএলসিসি’, কনসার্ট হল ‘ডেওয়ান ফিলহারমোনিক পেট্রোনাস’, আর্ট গ্যালারি, রেস্তোরাঁ, ও আন্তর্জাতিক ব্যবসা কেন্দ্র।
প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ছুটে যান এই স্থাপনার পাদদেশে। রাতের বেলা যখন টাওয়ারের গায়ে আলো ঝলমল করে, তখন মনে হয় যেন তারা আকাশে মিশে গেছে। শুধু ছবি তোলা নয়, বহু মানুষ সেখানে গিয়ে টাওয়ার ঘিরে থাকা পার্কে ঘোরেন, ফোয়ারার সৌন্দর্য উপভোগ করেন।
টাওয়ার দুটি মালয়েশিয়ার জাতীয় তেল কোম্পানি পেট্রোনাসের নামানুসারে পরিচিত। এটি শুধু স্থাপত্যের নিদর্শন নয়, বরং একটি সফল রাষ্ট্রের উন্নয়ন-পরিকল্পনারও প্রতীক। ১৯৯০-এর দশকে যখন মালয়েশিয়া নিজেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছিল, তখন এই টাওয়ার তার প্রতিশ্রুতির বহিঃপ্রকাশ হয়ে উঠেছিল।
পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার একদিকে যেমন পর্যটনের মূল কেন্দ্র, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক করপোরেট দুনিয়ার মিলনস্থল। এর পাশে গড়ে উঠেছে বহু বিলাসবহুল হোটেল, আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার ও অর্থনৈতিক হাব, যা কুয়ালালামপুর শহরকে বিশ্ব মানচিত্রে গুরুত্ব দিয়ে স্থান করে দিয়েছে।
বিশ্বের বহু নগরে সুউচ্চ ভবন থাকলেও পেট্রোনাস টুইন টাওয়ারের মতো একই সঙ্গে ঐতিহ্য, আধুনিকতা ও রাষ্ট্রীয় আত্মপরিচয়ের প্রতীক খুব কমই দেখা যায়।