হেলথ ডেস্ক:“মা, আমার পেটে ব্যথা করছে, কিন্তু কেন যেন রক্ত পড়ছে…”—এই প্রশ্ন শুনে মা চুপ করে গেছেন। “ভয় নেই, এটা মেয়েদের হয়” এই এক বাক্যে থেমে গেল আলোচনার দরজা। ১৩ বছরের রিমা তখনো বুঝে উঠতে পারেনি শরীরে ঠিক কী ঘটছে। বয়ঃসন্ধির এই জটিল সময়টা সে একা পার করেছে—লজ্জা, ভীতি আর অস্পষ্ট এক অনুভূতির সঙ্গে।
এ ঘটনা শুধু রিমার নয়। বাংলাদেশের হাজার হাজার কিশোরীর প্রতিদিনকার বাস্তবতা। শারীরিক পরিবর্তন, মনস্তাত্ত্বিক প্রশ্ন, যৌনতা নিয়ে কৌতূহল সব কিছুই ঘটে এই বয়সে। অথচ পরিবার, বিশেষ করে মা-বাবা, থাকে নীরব। স্কুলেও নেই খোলামেলা আলোচনার পরিবেশ।
বয়ঃসন্ধি মানেই শরীর ও মনে পরিবর্তন
এই বয়সে (৯ থেকে ১৬ বছর) মেয়েদের শরীরে হরমোনজনিত নানা পরিবর্তন আসে। স্তন বিকাশ, পিরিয়ড শুরু, গায়ের গন্ধ, আবেগের ওঠানামা। কিন্তু পরিবারে এসব বিষয়ে সচেতনতা অনেক কম। অনেকেই মেয়েদের গা ঢাকা জামা পরিয়ে বলেন, “এখন থেকে সাবধানে থাকবি” কিন্তু কেন? কী নিয়ে? সে বিষয়ে কোনো পরিষ্কার কথা নেই।
পিতামাতার ভূমিকা অনুপস্থিত
পিতামাতার অনেকেই মনে করেন, বয়ঃসন্ধি বিষয়ে কথা বললে সন্তান ‘বখে যাবে’। যৌনতা নিয়ে আলোচনা এখনো ট্যাবু। অথচ এই বয়সেই ছেলেমেয়েরা মোবাইল ফোনে, বন্ধুর মাধ্যমে নানা খণ্ডিত বা বিভ্রান্তিকর তথ্য পায়। অথচ সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারতেন বাবা-মা, যদি সাহস ও সচেতনতা থাকত।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই স্বাস্থ্য শিক্ষা
জাতীয় পাঠ্যক্রমে স্বাস্থ্য শিক্ষা থাকলেও তা বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ। শিক্ষকরা অনেক সময় বিষয়টি এড়িয়ে যান। পিরিয়ড, যৌন স্বাস্থ্য, আত্ম-পরিচয় নিয়ে আলোচনা প্রায় নিষিদ্ধের মতো। ফলে ছাত্রীরা ভুগে, সংকোচে থাকে, এবং শরীরকে ঘৃণা করতে শেখে।
মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব
এই সংকোচ ও অসচেতনতা থেকে অনেক সময় কিশোরীরা বিষণ্ণতায় ভোগে, আত্মবিশ্বাস হারায়, এমনকি নিজের শরীর নিয়েই গড়ে ওঠে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হলেও মেয়েরা পরিবারে বলতে পারে না, কারণ ‘শরীর’ নিয়ে কথা বলার সুযোগই নেই।
কী করা প্রয়োজন?
পরিবারে খোলামেলা আলোচনার সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি। মায়েদের পাশাপাশি বাবাদেরও সন্তানের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলা শিখতে হবে। বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্য বিষয়ক আলাদা সেশন চালু করা উচিত। সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে শিশু-কিশোরদের শরীর ও মন নিয়ে খোলামেলা ভাবনার দরজা খুলে দিতে হবে।