বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, দিনাজপুর: দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন চীনা প্রকৌশলী ওয়াং জিয়াং গো। মঙ্গলবার বিকালে খনির অভ্যন্তরে হাইড্রোলিক জগের নিচে চাপা পড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি বুধবার নিশ্চিত করেছে খনি কর্তৃপক্ষ ও পার্বতীপুর থানা পুলিশ।
প্রকৌশলী ওয়াং জিয়াং গো চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি-সিএসসি কনসোর্টিয়ামের শিফট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঘটনার সময় তিনি খনির এক হাজার ২৫০ ফুট নিচে ১৩০৫ নম্বর ফেইজে কর্মরত ছিলেন। ওই ফেইজে কয়লার মজুত শেষ হয়ে যাওয়ায় সেখানে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সরিয়ে ১৪০৬ নম্বর ফেইজে প্রতিস্থাপনের কাজ চলছিল।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) খান মো. জাফর সাদিক জানান, ১৩০৫ নম্বর ফেইজ থেকে হাইড্রোলিক সাপোর্ট সরানোর সময় একটি স্টিল রোপের সঙ্গে আটকে পড়ে হাইড্রোলিক জগের নিচে চাপা পড়েন প্রকৌশলী ওয়াং। দুর্ঘটনার পর দ্রুত তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত সাড়ে সাতটার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পার্বতীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যুর ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে।
এদিকে, খনির মাইনিংয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি অবিস্ফোরিত ডেটোনেটর বিস্ফোরণের ঘটনায় ইলিয়াস হোসেন নামে এক শিশু গুরুতর আহত হয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে খনির ইয়ার্ড থেকে পরিত্যক্ত একটি ডেটোনেটর বাড়িতে এনে এতে থাকা দুই তারের সঙ্গে মোবাইল ফোনের ব্যাটারির সংযোগ দেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যে তা বিস্ফোরিত হলে ইলিয়াছের ডান হাতের তিনটি আঙুল উড়ে যায়। আহত ইলিয়াছকে উদ্ধার করে প্রথমে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসক জন্য তাকে দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে কয়লাখনি সংলগ্ন চৌহাটি গ্রামের আশরাফুল ইসলামের ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম সরকার জানান, এ ঘটনায় চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিশুটির চিকিৎসার সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
- এর আগেও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে বেশ কয়েকটি প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে।
২০০৯ সালের ৫ জুন এক বিস্ফোরণে দুইজন শ্রমিক নিহত হন।
২০১০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গ্যাস জমে বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনজন শ্রমিক আহত হন।
২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর খনির ভিতরে অক্সিজেন সংকটে এক শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে।
২০১৮ সালের ২০ জানুয়ারি একটি মেশিনচাপায় এক চীনা শ্রমিক নিহত হন।
২০২১ সালের ২৭ জুলাই কয়লা উত্তোলনের সময় খনির দেয়াল ধসে একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়।