Home সারাদেশ মাদকাসক্ত স্বামীর হাতে স্ত্রী নির্যাতিত, হাসপাতালে আশ্রয় সুমাইয়া

মাদকাসক্ত স্বামীর হাতে স্ত্রী নির্যাতিত, হাসপাতালে আশ্রয় সুমাইয়া

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চরফ্যাশন ( ভোলা): ফিল্মি কায়দায় বোরকা পরে স্ত্রীকে সিএনজিতে তুলে নিয়ে গিয়ে তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ রেখে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছে স্বামী—চরফ্যাশনে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনায় ক্ষোভ আর বিষণ্নতায় ভেঙে পড়েছে এলাকাবাসী।

ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার চরফ্যাশনের দুলারহাট থানার আবুবকরপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। অভিযুক্ত স্বামীর নাম ফরহাদ, পিতার নাম লিটন সিকদার। নির্যাতনের শিকার স্ত্রী সুমাইয়া চরফ্যাশন পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাবিবুল্লাহর মেয়ে।

হাসপাতালে শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে সুমাইয়া বলছিলেন, “আমি জানতাম না, ওই সিএনজিতে বসা বোরকাপরা নারীটা আমারই স্বামী ফরহাদ! ওর মাদকাসক্তি আর অত্যাচারে জীবনটা আমার আগেই বিষ হয়ে উঠেছিল। এবার আমাকে সরাসরি মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল।”

দেড় বছর আগে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে হয়। এরপর থেকেই সুমাইয়া বুঝতে পারেন, তার স্বামী একজন মাদকাসক্ত। প্রায়ই মাদক সেবন করে তিনি স্ত্রীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন। শেষপর্যন্ত ৮ মাস আগে সুমাইয়া স্বামীর বাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন এবং একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন।

বুধবার সকালে অফিসে যাওয়ার পথে হঠাৎ একটি সিএনজি এসে তার সামনে থামে। চালক তাকে জানায়, সুমাইয়ার এক আত্মীয় ওই গাড়িতে বসে আছেন, যিনি একটু দূরে যেতে চাচ্ছেন। সহজ-সরল বিশ্বাসে গাড়িতে উঠলে দেখতে পান, বোরকাপরা এক নারী আগে থেকেই বসে আছেন। পরে ধীরে ধীরে গন্তব্য বদলিয়ে সিএনজি গন্তব্যহীন পথ ধরে।

অবশেষে সিএনজি থামে ফরহাদের বাড়িতে। সুমাইয়া হতভম্ব হয়ে দেখেন, সেই বোরকাপরা নারী আর কেউ নন, স্বয়ং তার স্বামী ফরহাদ। সেখানেই একটি নির্জন কক্ষে তাকে আটকিয়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলে নির্যাতন। কান্না ও আত্মচিৎকারে পর প্রতিবেশীরা টের পেলে তিনি কোনোভাবে পালিয়ে পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। পরে পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে চরফ্যাশন হাসপাতালে ভর্তি করেন।

সুমাইয়ার বাবা হাবিবুল্লাহ বলেন, “আমার মেয়ে ওর সংসার বাঁচাতে বহু চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ওই ছেলের ভেতর মনুষ্যত্ব বলতে কিছু নেই। এমন অমানবিক ঘটনা শুনে আমি বাকরুদ্ধ। আমরা ওর কঠিন বিচার চাই।”

অভিযুক্ত ফরহাদ ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে চলে গেছে। তার ব্যবহৃত ফোন নম্বরও বন্ধ রয়েছে, ফলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে দুলারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফ ইফতেখার বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে ভিক্টিমকে দেখে এসেছে। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

চরফ্যাশনের এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় স্থানীয় মহলে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। সচেতন মহল বলছে, নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে।