Home Third Lead কন্যাশিশু বিক্রি ও বাল্যবিবাহ: তালিবান শাসনে মধ্যযুগীয় বর্বরতা

কন্যাশিশু বিক্রি ও বাল্যবিবাহ: তালিবান শাসনে মধ্যযুগীয় বর্বরতা

আফগানিস্তানে তালিবান শাসনে বাড়ছে বাল্যবিবাহ: মাত্র ছ’বছরে পাত্রের বয়স ৪৫!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আফগানিস্তানে তালিবান সরকার ফের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশটিতে নারী অধিকার ও মানবিক অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। তারই এক মর্মান্তিক উদাহরণ সম্প্রতি সামনে এসেছে দক্ষিণ আফগানিস্তানের মারজাহ জেলা থেকে, যেখানে মাত্র ছ’বছরের এক শিশুকন্যার সঙ্গে বিয়ের আয়োজন করা হয় ৪৫ বছরের এক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের!

স্থানীয় গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শিশুটির বাবা চরম আর্থিক অনটনের কারণে মেয়েটিকে বিক্রি করে দেন। পাত্র ছিলেন একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তি, যার আগে থেকেই দুই স্ত্রী ও কয়েকজন সন্তান রয়েছে। এটি তার তৃতীয় বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।

ঘটনার খবর পেয়ে সরেজমিনে পৌঁছায় স্থানীয় তালিবান প্রশাসন। তারা বিয়ের আয়োজন বন্ধ করে দেয় এবং জানায়, শিশুটিকে এখনই বিয়ে দেওয়া যাবে না। তবে ভবিষ্যতের জন্য এক ভয়ানক নিদান দিয়ে যায় তারা—মেয়েটির বয়স ৯ বছর হলে বিয়ে দেওয়া যাবে! বিয়ের আয়োজন আপাতত স্থগিত হলেও শিশুটিকে “স্বামীর বাড়ি” পাঠানোর বিষয়টি সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করছেন অনেকেই।

অবাক করার বিষয় হলো, এমন স্পষ্টভাবে আইনবিরুদ্ধ একটি ঘটনার পরও শিশুটির বাবাকে আটক করলেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা দায়ের হয়নি। ফলে এটা স্পষ্ট যে, তালিবান সরকার কেবল সামাজিক চাপের মুখে কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে, তবে মৌলিকভাবে বাল্যবিবাহ বন্ধে কার্যকর কোনও আইনগত নীতি গ্রহণ করেনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২১ সালে তালিবান পুনরায় ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানে বাল্যবিবাহের হার অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। শিক্ষা থেকে মেয়েদের বঞ্চিত রাখা, পরিবারগুলোর চরম দারিদ্র্য এবং সামাজিক অস্থিরতা—এসব কারণ মিলেই কন্যাশিশুরা বিবাহযোগ্য বয়সে পৌঁছানোর আগেই বিয়ে বা বিক্রির শিকার হচ্ছে।

আফগানিস্তানভিত্তিক সংবাদ সংস্থা আমু টিভি জানিয়েছে, শিশুদের এই নির্যাতনের চিত্র কেবল একটি ব্যতিক্রম নয়, বরং সারাদেশে একইভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে পাহাড়ি ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন ঘটনা বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। সেখানে তালিবান প্রশাসনের কিছু অংশ এ ধরনের বিয়ে রুখলেও, অনেক সময়েই তারা ন্যূনতম বয়সের গণ্ডি ৯ বছর পর্যন্ত নামিয়ে এনে যৌন ও মানসিক শোষণকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়ার পথ খুলে দেয়।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, তালিবান শাসনামলে মেয়েদের পড়াশোনার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাল্যবিবাহের ঝুঁকিও বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইউনিসেফ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইতোমধ্যেই এই প্রবণতা বন্ধে জোরালো আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।

তারা বলছে, বাল্যবিবাহ শুধু একটি সামাজিক সমস্যা নয়, বরং এটি একটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। শিশুকন্যাদের ভবিষ্যৎ, শারীরিক নিরাপত্তা ও মানসিক সুস্থতা—সবকিছুর ওপর এই পরিস্থিতির মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।