আন্তর্জাতি ডেস্ক: ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’—এই নামেই স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিলটি পাস হওয়ার পর থেকেই নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মধ্যে। কারণ, এই বিল অনুযায়ী ২০২৬ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসার ক্ষেত্রে ২৫০ মার্কিন ডলার বা প্রায় ৩০ হাজার টাকার একটি নতুন ফি যোগ হচ্ছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি’।
নতুন এই ফি কার্যকর হলে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটন, শিক্ষার্থী কিংবা কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়া আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে।
কী এই ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি?
ভিসা ইন্টেগ্রিটি ফি হলো একটি অফেরতযোগ্য সারচার্জ, যা যুক্তরাষ্ট্রের নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসার আবেদনকারীদের গুনতে হবে। এই ফি প্রতিবছর ভোক্তা মূল্যসূচক অনুযায়ী সমন্বয় করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট এই নীতির বাস্তবায়ন করবে।
যেসব ভিসার ক্ষেত্রে এই ফি প্রযোজ্য:
- বি-১/বি-২ (পর্যটন ও ব্যবসায়িক ভিসা)
- এফ ও এম (শিক্ষার্থী ভিসা)
- এইচ-ওয়ান বি (কর্মসংস্থান)
- জে (এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম)
শুধুমাত্র কূটনৈতিক (এ ও জি ক্যাটাগরি) ভিসা এই ফি থেকে অব্যাহতি পাবে।
কত বাড়বে ব্যয়?
বর্তমানে একটি বি-১/বি-২ মার্কিন ভিসার খরচ ১৮৫ মার্কিন ডলার বা প্রায় ২২ হাজার ২০০ টাকা। এই খরচের সঙ্গে নতুন ফি, আই-৯৪ ফি (২৪ ডলার), ইএসটিএ ফি (১৩ ডলার) যোগ হলে মোট খরচ দাঁড়াবে প্রায় ৪৭২ মার্কিন ডলার বা ৫৬ হাজার ৬০০ টাকা। অর্থাৎ, মোট ব্যয় এখনকার তুলনায় আড়াই গুণেরও বেশি।
শুধু পর্যটক নয়, শিক্ষার্থী, প্রযুক্তি খাতে কর্মরত বাংলাদেশি পেশাজীবী, গবেষক এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রেও এই খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।
ফির রিফান্ডযোগ্যতা
ফি সাধারণভাবে রিফান্ডযোগ্য নয়। তবে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলে এটি আংশিক ফেরত পাওয়া যাবে। যেমন—
- ভিসার শর্ত মেনে পাঁচ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করলে
- বৈধভাবে থাকার মেয়াদ বাড়ালে বা বৈধভাবে স্ট্যাটাস পরিবর্তন করলে (যেমন: গ্রিন কার্ড)
কিন্তু কেউ যদি ভিসার শর্ত ভঙ্গ করেন, নির্ধারিত সময়ের বেশি অবস্থান করেন—তাহলে এই ফি ফেরতযোগ্য হবে না।
রেমিট্যান্সেও কর
উল্লেখ্য, একই বিলে আরও একটি বিতর্কিত অংশ রয়েছে—যেটি হলো যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অভিবাসীদের নিজ দেশে টাকা পাঠানোর ওপর ১ শতাংশ আবগারি শুল্ক। এটি রেমিট্যান্সে সরাসরি প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাংলাদেশি অভিবাসীরাও এই করের আওতায় পড়বেন।
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিল যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ব্যবস্থায় একটি কঠোর বার্তা দিচ্ছে। একদিকে এটি সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ানোর চেষ্টা, অন্যদিকে বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকার পথ আরও কঠিন করা।
বাংলাদেশের ভিসা এজেন্ট ও বিদেশগামী শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, নতুন এই নিয়ম শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্নে বড় ধাক্কা দিতে পারে। আবার যারা চিকিৎসা বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রে যান, তাদের জন্যও ব্যয় বহন কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে।