Home Second Lead  বরগুনায় সোহাগের দাফন, স্বজনদের কান্নায় ভারী আকাশ

 বরগুনায় সোহাগের দাফন, স্বজনদের কান্নায় ভারী আকাশ

ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, বরগুনা: চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো এক ব্যবসায়ীকে। নিহত লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের (৩৯) মরদেহ যখন তার বরগুনার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়, তখন চারপাশে শুধুই হাহাকার। কান্নায় ভেঙে পড়েন মা হারা সন্তান, স্ত্রী, খালা, মামা আরো অগণিত স্বজন।

শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে ঢাকার মিডফোর্ড থেকে লাশবাহী গাড়িটি পৌঁছায় বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে। সেখানে তার মায়ের কবরের পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, মাত্র ৭ মাস বয়সে বজ্রপাতে বাবাকে হারানো সোহাগ বেড়ে ওঠেন মায়ের কোলেই। জীবিকার তাগিদে মা আলেয়া বেগম ঢাকায় চলে যান তিন সন্তানকে নিয়ে। তখন থেকেই ঢাকায় ছিলেন সোহাগ। জীবনের লড়াইয়ে জিতে উঠেছিলেন মিডফোর্ড এলাকায় একটি দোকান প্রতিষ্ঠা করে মেসার্স সোহানা মেটাল।

কিন্তু সেখানে শুরু হয় চাঁদাবাজদের তাণ্ডব। সোহাগের ওপর প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা করে চাঁদা দেওয়ার চাপ সৃষ্টি করা হতো। তিনি রাজি না হওয়ায় একসময় দোকানটি তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর গত বুধবার বিকেলে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে আটকে রেখে পাথর দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় সোহাগকে।

স্বজনরা জানায়, হত্যার আগে বারবার চাপ দিয়েও সোহাগ রাজি হননি টাকা দিতে। আর তার এই অনড় অবস্থানই হয়ে ওঠে প্রাণঘাতী।

সোহাগের কিশোর সন্তান সোহানা ও সোহান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমরা এতিম হয়ে গেছি। বাবাকে যারা মেরেছে, তাদের বিচার চাই। আমাদের বাবাকে এমনভাবে কেন মারল?”

সোহাগের খালা সাজেদা বেগম বলেন, “ও ব্যবসা করতো নিজের ঘামে। কেউ কখনো অভিযোগ করেনি। শুধু চাঁদা না দেওয়ার কারণে ওকে হত্যা করল? এত বড় অন্যায় কেউ মেনে নিতে পারবে না।”

নিহতের মামা মো. মন্টু মিয়া বলেন, “আমার ভাগিনা ভালো ছেলে ছিল। পশুর মতো পাথর দিয়ে তাকে হত্যা করেছে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই ফাঁসি চাই।”

স্ত্রী লাকি বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “ওরা আমার স্বামীর ব্যবসাটা নিতে চেয়েছিল, চাঁদা চাইত। আমার স্বামী দেয়নি। এজন্যই ওকে মেরে ফেলল। আমার ছোট ছোট বাচ্চারা এখন কোথায় যাবে?”

এই নির্মম হত্যাকাণ্ড শুধু একটি পরিবারের বুক খালি করেনি, জাগিয়ে তুলেছে প্রশ্ন: চাঁদা না দিলে কি এভাবেই প্রাণ যাবে শহরের বুকে?