কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম: আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে জলদস্যুতা ও সশস্ত্র ডাকাতি। সবচেয়ে বেশি উদ্বেগজনক পরিস্থতি সিঙ্গাপুর প্রণালীতে। তবে, সোমালিয়া উপকূল থেকে নতুন কোন ঘটনার সংবাদ নেই।
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি)-এর ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরো (আইএমবি)’র সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়কালে ৯০টি জলদস্যুতা ও সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই হার ৫০ শতাংশ অধিক। ২০২০ সালের পর এই প্রথমবারের মতো বছরের প্রথমার্ধে সর্বোচ্চ সংখ্যক এমন অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আলোচ্য ঘটনাগুলোর মধ্যে ৭৯ টি জাহাজে সশস্ত্র ডাকাতি। ৬টি ব্যর্থ ডাকাতির অপচেষ্টা। এ ছাড়া ৪টি জাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা এবং একটি জাহাজের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা। এ সব হামলায় জাহাজের নাবিকদের নিরাপত্তা সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে পড়ে। ৪০ জন নাবিককে জিম্মি করা হয়েছে এবং ১৬ জনকে অপহরণ করা হয়। ৩ জন নাবিক জলদস্যুদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন।
বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে সিঙ্গাপুর প্রণালীতে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে এখানেই ৫৭টি জলদস্যুতা ও সশস্ত্র ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। যা পুরো বিশ্বব্যাপী ঘটনার প্রায় ৬৩ শতাংশ। অথচ ২০২৪ সালের একই সময়ে এই সংখ্যাটি ছিল মাত্র ১৫।
বিশাল আকৃতির জাহাজ, বিশেষতঃ ১ লাখ ৫০ হাজার ডেডওয়েট টন ক্ষমতার পণ্যবাহী জাহাজগুলোকে সিঙ্গাপুর প্রণালীর মতো সরু এবং ব্যস্ত রুটে আক্রমণের ঘটনা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। এই রুটে জলদস্যুদের হামলা সফলতার হার প্রায় ৯৫ শতাংশ, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য একটি বড় হুমকি।
সিঙ্গাপুর প্রণালীতে হওয়া ৫৭টি ঘটনার মধ্যে ৩৪টি হামলায় আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে। আইএমবি পরিচালক মাইকেল হাওলেট উল্লেখ করেন, “সিঙ্গাপুর প্রণালী বৈশ্বিক বাণিজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ পরিবহনের অন্যতম পথ। এখানকার হামলার এই ঊর্ধ্বগতি উদ্বেগজনক এবং তা আমাদের নাবিকদের নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের স্থিতিশীলতাকে হুমকির সম্মুখীন করেছে।
এদিকে গিনি উপসাগরে জলদস্যুতার ঘটনা তুলনামূলকভাবে কম হলেও এখানেও নাবিকদের নিরাপত্তা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে এই অঞ্চলে ১২টি জাহাজে জলদস্যু হামলার ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে, সোমালিয়া উপকূলে এপ্রিল ২০২৫-এর পর থেকে নতুন কোনো হামলার কোন ঘটনা নেই। তবে, আইএমবি সতর্ক করে বলেছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাব কমে এলে ওই এলাকায় জলদস্যুতার ঝুঁকি আবারও বাড়তে পারে।
আইএমবি বিশ্বজুড়ে সকল নাবিক ও নৌযানকে ঝুঁকিপূর্ণ জলপথ অতিক্রমের সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন ও সর্বশেষ ‘বেস্ট ম্যানেজমেন্ট প্র্যাকটিস’ অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে।