হেলথ ডেস্ক: হাইপারথাইরয়েডিজম একটি উদ্বেগজনক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা সারাবিশ্বের লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রভাবিত করে। এক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি থাইরয়েড হরমোন উৎপাদন ও নিঃসরণ করে। এই অতিরিক্ত হরমোন শরীরের বিপাক প্রক্রিয়াকে অস্বাভাবিকভাবে ত্বরান্বিত করে, যার ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে হৃদযন্ত্র, স্নায়ুতন্ত্র এবং হরমোন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় এর প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
থাইরয়েড একটি ছোট প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থি, যা গলার সামনের অংশে অবস্থিত। এটি শরীরের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যখন এই গ্রন্থিটি অতিরিক্ত হরমোন তৈরি করে, তখন তা হাইপারথাইরয়েডিজমে পরিণত হয়।
এই রোগের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রেভস ডিজিজ, যা একটি অটোইমিউন সমস্যা। এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাইরয়েডকে অতিরিক্ত হরমোন উৎপাদনে বাধ্য করে। এছাড়া থাইরয়েড নোডিউল, থাইরয়েডাইটিস, অতিরিক্ত আয়োডিন গ্রহণ এবং থাইরয়েড হরমোনের ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহারও এই রোগের কারণ হতে পারে।
হাইপারথাইরয়েডিজমের উপসর্গগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। এর মধ্যে রয়েছে দ্রুত হৃদস্পন্দন বা বুক ধড়ফড়, অস্বাভাবিক ওজন হ্রাস, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া বা গরম লাগা, অনিদ্রা ও উদ্বেগ, হাত কাঁপা, মাসিক অনিয়ম (মহিলাদের ক্ষেত্রে), চোখ বড় হয়ে যাওয়া (বিশেষত গ্রেভস ডিজিজে), এবং দুর্বলতা বা ক্লান্তি। এসব উপসর্গ দেখা দিলে রোগনির্ণয়ের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়, যেখানে T3 এবং T4 হরমোনের মাত্রা বেশি এবং TSH কম থাকে।
গ্রেভস ডিজিজ শনাক্ত করতে থাইরয়েড অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া থাইরয়েড স্ক্যান বা আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে গ্রন্থির গঠন ও কার্যকারিতা জানা যায়।
চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথমেই ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে হরমোন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সাধারণত কার্বিমাজোল বা প্রোপিলথাইওইউরাসিল ব্যবহার করা হয়। উপসর্গ কমাতে বেটা–ব্লকার ব্যবহার করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে রেডিওঅ্যাকটিভ আয়োডিন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়, যা থাইরয়েড গ্রন্থিকে ধ্বংস করে। যদি এসব চিকিৎসায় সাড়া না পাওয়া যায়, তাহলে সার্জারির মাধ্যমে থাইরয়েড গ্রন্থি অপসারণ করা হয়।
জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনাও গুরুত্বপূর্ণ। আয়োডিনসমৃদ্ধ খাবার পরিমিতভাবে গ্রহণ করা উচিত, চা-কফির মতো ক্যাফিনযুক্ত পানীয় কমিয়ে দিতে হবে, নিয়মিত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণের পাশাপাশি নিয়মিত ফলোআপ করাতে হবে।
হাইপারথাইরয়েডিজম একটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য সমস্যা হলেও দীর্ঘদিন অবহেলা করলে এটি হৃদরোগ, হাড় ক্ষয় এবং মানসিক অস্থিরতার মতো জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।