বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, বগুড়া: বগুড়া শহরের ইসলামপুর হরিগাড়ী এলাকায় এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন দাদি ও নাতবউ। একই ঘটনায় ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন এক কিশোরী। বুধবার (১৬ জুলাই) রাত সোয়া ৮টার দিকে পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ওই এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন ইসলামপুর হরিগাড়ী এলাকার মৃত আব্দুল কুদ্দুস বুলুর স্ত্রী লাইলী বেওয়া (৮৩) ও পারভেজ ইসলামের স্ত্রী হাবিবা ইয়াসমিন (২১)। তারা সম্পর্কে দাদী শাশুড়ি ও নাতি বউ। আহত হয়েছেন বুলুর মেয়ে ও লাইলী বেওয়ার নাতনি বন্যা (১৬), যিনি বর্তমানে চিকিৎসাধীন।
আহতের ফুফাতো ভাই মো. খোকনের ভাষ্যমতে, সৈকত নামে এক তরুণ দীর্ঘদিন ধরে বন্যাকে পছন্দ করত এবং প্রায়ই তাকে উত্ত্যক্ত করত। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য না থাকায় সৈকত আরও সাত-আটজনকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। এ সময় বন্যার ভাবি হাবিবা ইয়াসমিন প্রতিবাদ করলে তাকে প্রথমে গলায় ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে লাইলী বেওয়ার গলাতেও ছুরি চালায় তারা। এ সময় বন্যা দৌড়ে এলে তার পেটেও ছুরিকাঘাত করা হয়।
ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক হাবিবা ও লাইলী বেওয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। বন্যার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় পুলিশ। থানা পুলিশের মতে, ইসলামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বন্যাকে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন একই এলাকার যুবক সৈকত। বন্যা তা প্রত্যাখ্যান করায় স্কুলে যাতায়াতের পথে তাকে উত্যক্ত করতেন তিনি।
পুলিশ আরও জানায়, এ নিয়ে কয়েক দফা সালিশ বৈঠকও হয় এলাকায়। এরই জেরে বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওই স্কুলছাত্রীর বাসায় ঢুকে বন্যাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে সৈকত। এ সময় তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে দাদি লাইলী বেওয়া ও চাচি হাবিবা ইয়াসমিনকেও ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় সৈকত।
পরে স্বজনরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে লাইলি বেওয়া ও হাবিবা ইয়াসমিনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। অভিযুক্তকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানায় পুলিশ।
বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা মঞ্জুর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “আমরা তদন্ত শুরু করেছি এবং অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে। প্রাথমিকভাবে প্রেমঘটিত বিরোধের বিষয়টি উঠে এসেছে, তবে পূর্ণ তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।”
এদিকে ভয়াবহ এই হত্যাকাণ্ডে এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রতিবেশীরা বলছেন, এই পরিবারের সঙ্গে কারও কোনো বিরোধ ছিল না। সৈকতের আগ্রাসী আচরণ নিয়ে আগেও কয়েকবার কথা উঠেছিল, তবে এমন ভয়াবহ কাণ্ড ঘটবে তা কেউ কল্পনাও করেনি।
পুলিশ বলছে, জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে এবং মামলা প্রক্রিয়াধীন। স্থানীয়দের অনেকেই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।