আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে পাকিস্তানের এক প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামে হাজির হয়েছেন ৪৭ বছর বয়সী এক মার্কিন নারী। ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের স্প্রিংফিল্ড শহরের বাসিন্দা মাইন্ডি রাসমুসেন দীর্ঘ এক বছর অনলাইনে পরিচয়ের পর গত ২৯ জুন পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার দৃষ্টিনন্দন উপত্যকা ‘উসেরাই দারা’তে এসে বিয়ে করেছেন ৩১ বছর বয়সী যুবক সজিদ জেব খানকে।
একটি ফেসবুক ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট থেকেই শুরু এই গল্প।
“সজিদ প্রথমে আমাকে বন্ধু অনুরোধ পাঠায়। আমি তাকে দেখতে সুদর্শন মনে করি, তাই গ্রহণ করি,” বলে হাসতে হাসতে স্মৃতিচারণ করেন মাইন্ডি, যিনি এখন ইসলাম গ্রহণ করে নাম নিয়েছেন জুলেখা জেব।
ফেসবুক বার্তা থেকে ভিডিওকলে, তারপর পরিবারকে জানানো ও অবশেষে প্রেম পরিণয়ে।
“একসময় আমি তাকে বলি আমরা এতটাই কাছাকাছি চলে এসেছি, কেন আমরা বিয়ে করছি না?” জানান জুলেখা।
পাকিস্তানে আসার পর উষ্ণ অভ্যর্থনায় মুগ্ধ হয়েছেন এই মার্কিন নারী।
“এই যে একসাথে থাকা, একে অন্যকে আপন মনে করা আমাদের দেশে এমনটা দেখা যায় না,” বলেন তিনি। “এখানে সবাই একে অন্যের প্রতিবেশী, বন্ধু, আত্মীয়। এটা এক দারুণ অনুভব।”
একটি ব্যতিক্রমী প্রেমের পরিণতি
সজিদ খান একজন স্থানীয় ওষুধের দোকানে কাজ করেন এবং নয় ভাই-বোনের মধ্যে বড়। তিনি জানান, মাইন্ডির সঙ্গে তার প্রথমে বন্ধুত্ব হয় অনলাইনে, এরপর গড়ে ওঠে ভালোবাসা। ভিসা জটিলতায় তিনি আমেরিকায় যেতে না পারলেও মাইন্ডি নিজেই সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানে এসে বিয়ের।
২ জুলাই ইসলামি নিয়মে ‘নিকাহ’ অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় রীতি মেনে। গ্রামবাসীরা তাকে উপহার, ভালোবাসা আর আতিথেয়তায় বরণ করেন। এই দৃশ্য বেশ আলোড়ন তোলে।
‘সন্ত্রাস নয়, শান্তি ও ভালোবাসা পেয়েছি’
যেখানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খাইবার পাখতুনখোয়ার কড়াকড়ি, নিরাপত্তা আর জঙ্গি হামলার গল্প শোনা যায়, সেখানে মাইন্ডি বলছেন ভিন্ন কথা।
“আমি এখানে কোনো সন্ত্রাস বা সহিংসতার মুখোমুখি হইনি। এখানে নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ এবং হৃদয়বান মানুষ,” বলেন তিনি।
তার পরামর্শ,
“পাকিস্তান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা বাদ দিন। খোলা মনে আসুন, দেখবেন কী সুন্দর একটা দেশ।”
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
জুলেখার একমাসের ভিসার মেয়াদ শেষ হবে ১৪ আগস্ট। তারপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাবেন এবং সজিদের জন্য অভিবাসন প্রক্রিয়া শুরু করবেন।
“আমি ওকে নিয়ে আবার ফিরবো। তখন সজিদ আমেরিকায় আমার সঙ্গে থাকবে,” জানান জুলেখা।
তবে সজিদ স্পষ্ট করে বলেন, তার এই বিয়ে নাগরিকত্বের জন্য নয়—
“সে ইচ্ছায় এসেছে, ইচ্ছায় বিয়ে করেছে, এখন ইচ্ছায় থাকতে ও যেতে পারে,” বলেন সজিদ, যার কণ্ঠে সম্মান আর দায়বদ্ধতার ছাপ।