মোস্তফা তারেক, নিউ ইয়র্ক: জ্যাকব জে জাভিটস ফেডারেল ভবনের ১২তম তলা। এই সেই জায়গা যেখানে বিচারপ্রার্থীরা আশা নিয়ে হাজির হন। কিন্তু এখন এই ভবনের করিডোরজুড়ে ছড়িয়ে আছে ভয়ের ছায়া। আদালত শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আচমকা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে গুঞ্জন, “ওরা এসেছে”। মুখোশধারী এজেন্টরা নীরবে অপেক্ষায়, হাতে ধরা তালিকাভুক্ত অভিবাসীদের ছবি। কেউ বেরোতেই তাঁকে চুপিসারে ঘিরে ফেলে, চোখের পলকে নিয়ে যায় নিচতলার সিঁড়ি ঘেঁষা গোপন করিডোরে।
এটাই এখনকার নিউ ইয়র্কের নির্মম বাস্তবতা। ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর অভিবাসন নীতিতে এনেছেন কঠোরতা। শ্লোগান স্পষ্ট, বছরে ১০ লাখ অভিবাসী ফেরত পাঠাতে হবে। আর সেই লক্ষ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে আদালতের মতো একটি প্রাতিষ্ঠানিক জায়গাকে। যেখানে মানুষ আশ্রয়ের আশায় যায়, অথচ সেখানেই তৈরি হচ্ছে ফাঁদ।
নিউ ইয়র্ক শহরের নির্বাচিত কর্মকর্তা ব্র্যাড ল্যান্ডার জানালেন কীভাবে একটি আদালতের শুনানিকে ফাঁদ বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। তিনি নিজেও আটক হয়েছিলেন গত মাসে, কার্লোস নামের এক প্যারাগুয়ান অভিবাসীর পাশে দাঁড়াতে গিয়ে। কার্লোস তখন আন্তর্জাতিক নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনের আওতায় আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন। বিচারক তাঁকে কাগজপত্র সাজিয়ে আবার হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু শুনানি শেষ হতেই পরিচয়বিহীন এজেন্টরা তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তাঁর সঙ্গে আসা বোনকেও ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলা হয়।
ল্যান্ডার বলেন, এই ভবনের সামনে দাঁড়ালেই বোঝা যায় আমরা এখন এমন এক সময়ে আছি, যেখানে আইনের শাসনের চেয়ে ভয়ের শাসনই প্রাধান্য পাচ্ছে। আর এই ভয় শুধু আদালত ভবনে নয়, ছড়িয়ে পড়েছে অভিবাসীদের ঘুমহীন রাতের ভেতরেও।
অন্যদিকে হোয়াইট হাউস বলছে, আইসির সাহসী পুরুষ ও নারী সদস্যরা প্রতিদিন নিজের জীবন বাজি রেখে সমাজ থেকে খারাপ লোকদের সরিয়ে দিচ্ছেন।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, শুধু কি খারাপ লোকদেরই সরানো হচ্ছে? নাকি আশ্রয়প্রার্থীরাও এখন আর আশার ছায়ায় দাঁড়াতে পারছেন না?
নিউ ইয়র্কের এই করিডোর এখন আর শুধু আদালতের পথ নয়, এটি যেন অভিবাসীদের ভয় ও আশঙ্কার রুটম্যাপ। ন্যায়বিচারের টেবিল এখন যেন পরিণত হয়েছে এক নির্মম অভিযানের মঞ্চে, যেখানে অনিশ্চয়তা, আতঙ্ক আর পরিচয়হীন শিকারিরাই রাজত্ব করছে।
সিটিএ:
চোখ রাখুন businesstoday24.com-এ। ফলো ও লাইক করুন আমাদের পেজ।