Home আন্তর্জাতিক থাইল্যান্ডে যৌন কেলেঙ্কারিতে বিপর্যস্ত বৌদ্ধ সন্ন্যাসজীবন

থাইল্যান্ডে যৌন কেলেঙ্কারিতে বিপর্যস্ত বৌদ্ধ সন্ন্যাসজীবন

ছবি: এএফপি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বৌদ্ধধর্মের প্রাচীন ঐতিহ্য ও সন্ন্যাসজীবনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা থাই সমাজে দীর্ঘকাল ধরে রচিত। কিন্তু সাম্প্রতিক এক যৌন-চাঁদাবাজির কেলেঙ্কারি পুরো সন্ন্যাসী সমাজকে কাঁপিয়ে দিয়েছে।

থাই পুলিশ সম্প্রতি এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে যিনি অন্তত ১১ জন ভিক্ষুর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে তাদের কাছ থেকে গোপনে তোলা অন্তরঙ্গ ছবির মাধ্যমে চাঁদা আদায় করতেন। এসব ভিক্ষু তাদের মঠ থেকে প্রায় ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের অনুদান তছরুপ করে ওই নারীকে দিয়েছেন বলে পুলিশের দাবি।

এ ঘটনা শুধু ভিক্ষুদের চারিত্রিক দ্বৈততা নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি করেনি, প্রশ্ন উঠিয়েছে তাদের সামাজিক মর্যাদা ও জবাবদিহিতা নিয়েও। থাই রাজা মহা বাজিরালংকর্ন ইতোমধ্যে তার ৭৩তম জন্মদিন উপলক্ষে আমন্ত্রিত ৮০ জনের বেশি ভিক্ষুকে বাদ দিয়েছেন, যাদের ‘অনুচিত আচরণে’ থাই জনগণের মানসিক আঘাত লেগেছে।

থাইল্যান্ডের জাতীয় বৌদ্ধ অফিস পুরো ঘটনার তদন্তে পুলিশি অভিযান শুরু করেছে। অভিযুক্ত ভিক্ষুদের সন্ন্যাস জীবনের পোশাকও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের বক্তব্য, জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনাই এখন প্রধান লক্ষ্য।

থাই সমাজে থেরবাদ বৌদ্ধধর্ম হাজার বছরের ইতিহাস বহন করে। ধর্মীয় ছুটিতে মদ নিষিদ্ধ, পবিত্র বস্তু রক্ষায় আইন—সবই এই ধর্মীয় প্রভাবের ফসল। অধিকাংশ থাই পুরুষ জীবনে অন্তত একবার হলেও সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করে। তবে সম্প্রতি কিছু সন্ন্যাসী ব্যক্তিগত বিলাসিতা ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের মনে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি।

ঘটনার কেন্দ্রে থাকা নারী টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, একসময় তার ‘অপচয়ের স্বভাব’ তৈরি হয়, কারণ সন্ন্যাসীরা তাকে দিনে প্রায় ৯০ হাজার ডলার পর্যন্ত কেনাকাটা করাতেন।

বাইকচালক মংকোল সুদাথিপ বলেন, ‘‘আগে যেমন ধর্মে সম্পৃক্ত ছিলাম, এখন আর ততটা নই। বরং এখন আমি হাসপাতাল বা দরিদ্র স্কুলে দান করি। মন্দিরে দান করার চেয়ে সেটা বেশি অর্থবহ মনে হয়।’’

এই প্রথম নয়, ২০১৭ সালে ধম্মকায়া মঠে অভিযান চালিয়ে তৎকালীন প্রধান ভিক্ষুকে ৩৩ মিলিয়ন ডলার মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চলতি বছরের মে মাসেও এক সন্ন্যাসীকে ১০ মিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি জড়িত ছিলেন অনলাইন জুয়া চক্রে।

ধর্মতত্ত্ববিদ ড. দানাই জানান, ‘‘এই ধরনের একের পর এক কেলেঙ্কারি বিশেষ করে জ্যেষ্ঠ সন্ন্যাসীদের মধ্যে সমাজকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। মানুষ এখন প্রশ্ন তোলে—অনুদান কী ধর্মীয় প্রয়োজনে, নাকি ব্যক্তিগত ভোগের জন্য ব্যবহৃত হয়?’’

চাপে পড়ে থাই সরকার তিন মাসের মধ্যে সন্ন্যাসজীবন পরিচালনায় কড়া নিয়ন্ত্রণ ও দান-অর্থের হিসাব প্রকাশ বাধ্যতামূলক করার ঘোষণা দিয়েছে।

তবে সব থাই নাগরিক এখনও ধর্মে আস্থা হারাননি। উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ডের ৫২ বছর বয়সী নিরাপত্তাকর্মী কামফুন পারিমিফুট বলেন, ‘‘সন্ন্যাসীদের ওপর বিশ্বাস হারানো যায়, কিন্তু বৌদ্ধ শিক্ষার ওপর নয়। ধর্ম আমাদের সঠিকভাবে বাঁচতে শেখায়।’’

📌  এমন প্রতিবেদন পড়তে ভিজিট করুন businesstoday24.com

📲 ফলো করুন ফেসবুক পেজ businesstoday24 — আপডেট থাকুন আলোচিত বিশ্বসংবাদের সঙ্গে!