Home স্বাস্থ্য ভুল আশ্বাসেই হৃদ্‌রোগে মৃত্যু: এআই প্রযুক্তিতে অদৃশ্য ঝুঁকির সন্ধান

ভুল আশ্বাসেই হৃদ্‌রোগে মৃত্যু: এআই প্রযুক্তিতে অদৃশ্য ঝুঁকির সন্ধান

হেলথ ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা (এনএইচএস) পরিচালিত একাধিক পরীক্ষামূলক প্রকল্পে দেখা গেছে, প্রচলিত হার্ট স্ক্যান পরীক্ষায় প্রায় অর্ধেক ঝুঁকিপূর্ণ রোগী শনাক্তই হচ্ছিল না। অথচ, এই রোগীদের অনেককেই বলা হয়েছিল—তাঁদের হৃদ্‌যন্ত্র ভালো আছে।

নতুন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর প্রযুক্তি দিয়ে এসব স্ক্যান পুনর্মূল্যায়ন করার পর দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চিকিৎসার পরিকল্পনা বদলাতে হয়েছে—আরও বেশি রোগীকে স্ট্যাটিন জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়েছে এবং অনেককে জীবনের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করে প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত ‘CaRI-Heart’ নামের এই এআই টুল এমনসব সতর্কতা চিহ্ন শনাক্ত করতে পারে, যা সাধারণ চক্ষুতে দেখা সম্ভব নয়—বিশেষত, ধমনির চারপাশের চর্বি অংশে থাকা অদৃশ্য প্রদাহ।

ভুল আশ্বাসেই বিপর্যয়

প্রতিবছর যুক্তরাজ্যে প্রায় তিন লাখ মানুষ হার্টের সিটি স্ক্যান করান বুক ধড়ফড়, ব্যথা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যার কারণে। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশকে বলা হয়, চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, ভবিষ্যতে যে হৃদ্‌রোগের ঘটনা ঘটে, তার দুই-তৃতীয়াংশ ঘটে এই আশ্বস্ত রোগীদের মধ্যেই।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চারাল্যাম্বোস অ্যান্টোনিয়াডেস বলেন, ‘‘এই আশ্বাসে থাকা রোগীদের অনেকেই ভুলভাবে অব্যাহতি পান, অথচ তাঁরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন তাদের শনাক্ত করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যাচ্ছে।’’

চোখে দেখা যায় না, প্রযুক্তি ধরছে

CaRI-Heart টুল একটি সাধারণ সিটি স্ক্যানকে বিশ্লেষণ করে ধমনির চারপাশে থাকা চর্বিতে প্রদাহের মাত্রা নির্ধারণ করে। এই প্রদাহই পরবর্তীতে ধমনির অভ্যন্তরে প্ল্যাক rupture বা ফেটে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক ঘটাতে পারে। এ প্রযুক্তি এতোই সংবেদনশীল যে এটি সাধারণ চিকিৎসকদের চোখে ধরা না পড়া সূক্ষ্ম পরিবর্তনও শনাক্ত করতে পারে।

স্বাস্থ্য পরিবর্তনে রোগীদের মনোভাবেও বদল

এনএইচএস-এর পরীক্ষামূলক স্কিমের অংশ হিসেবে অক্সফোর্ড, লিভারপুল, লেস্টার, মিল্টন কিনস এবং উলভারহ্যাম্পটনের হাসপাতালগুলোতে মোট ১৪২৫টি স্ক্যান বিশ্লেষণ করা হয়। যেসব রোগীকে তাঁদের ধমনির প্রদাহের ছবি দেখানো হয়েছিল, তাঁরা চিকিৎসা নিতে ও জীবনধারা বদলাতে অনেক বেশি আগ্রহী ছিলেন।

নতুন সম্ভাবনার দিক নির্দেশ

প্রফেসর সাইমন রে, এনএইচএস-এর হৃদ্‌রোগবিষয়ক জাতীয় পরিচালক বলেন, ‘‘হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক প্রতিরোধে এটি হতে পারে এক বিশাল পরিবর্তন। স্মার্ট স্ক্যানের মাধ্যমে আমরা এখন অদৃশ্য সংকেতগুলো ধরতে পারছি।’’

বিশ্লেষণ অনুযায়ী, বছরে তিন লাখ রোগীর মধ্যে এই প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলে প্রায় ৫,৭৬০টি হার্ট অ্যাটাক, ৭,৭৪০টি মৃত্যু, ৪,০৮০টি হৃদ্‌ব্যর্থতা এবং ১,৩২০টি স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। অর্থাৎ, মোট ১৯ হাজার গুরুতর হৃদ্‌সংক্রান্ত ঘটনার ঝুঁকি কমবে।

সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—ভুল আশ্বাস

লিভারপুল হার্ট অ্যান্ড চেস্ট হাসপাতালের কার্ডিওলজিস্ট ডা. টিম ফেয়ারবেয়ার্ন বলেন, ‘‘আমরা যাঁদের স্পষ্ট সমস্যা আছে তাঁদের তো চিহ্নিত করতে পারি, কিন্তু অধিকাংশ রোগীকেই বলে দিই, ‘তোমার কিছু হয়নি’। এরপর তাঁরা ধূমপান চালিয়ে যান, খাদ্যাভ্যাস পাল্টান না, ব্যায়াম করেন না। এই ভুল আশ্বাসই তাঁদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।’’

‘ট্রাফিক লাইট’ সিস্টেমে ঝুঁকির র‍্যাঙ্কিং

এআই বিশ্লেষণের মাধ্যমে রোগীর ঝুঁকি ‘সবুজ, হলুদ, লাল’ রঙে শ্রেণিবদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, যেন চিকিৎসক দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন—ওষুধ বাড়াতে হবে না জীবনধারা বদলাতে হবে।

বর্তমানে জাতীয় স্বাস্থ্য ও যত্ন নীতিমালা সংস্থা (NICE) প্রযুক্তিটি পর্যালোচনা করছে, যা অনুমোদন পেলে যুক্তরাজ্যজুড়ে ব্যাপকভাবে চালু হতে পারে।

🔊 জনসচেতনতামূলক বার্তা

👉 বুক ধড়ফড়, ব্যথা, শ্বাসকষ্ট হলে অবহেলা নয়
👉 সাধারণ স্ক্যানে সমস্যা না মিললে, দ্বিতীয় মতামত নিন
👉 AI স্ক্যান আপনার অদৃশ্য ঝুঁকি ধরতে পারে
👉 হৃদ্‌যন্ত্রের যত্ন নিন, জীবন বাঁচান

🗣️ প্রতিরোধই সেরা চিকিৎসা

👉  আরও খবর জানতে ভিজিট করুন বিজনেসটুডে২৪.কম