বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, সিলেট: সিলেটে বিএনপির দুই প্রবীণ নেতাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। ভিডিওটি দু’দিন আগের এক দলীয় সভার, যেখানে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বক্তব্য দিচ্ছিলেন, আর পাশে এসে দাঁড়ান আরেক উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। এই ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে দলীয় ঐক্য এবং অভ্যন্তরীণ বিভেদ নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দেন আরিফ।
বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমার বক্তব্য আর লম্বা করবো না। যার জন্য বক্তব্য লম্বা করেছিলাম, তিনি এসে গেছেন। এখন তিনি বক্তব্য রাখবেন।” এর পরেই তিনি সুর চড়িয়ে বলেন, “এই সিলেটে আমরা প্রমাণ করতে চাই—আমাদের মধ্যে কোনোভাবে কোনো বিরোধ নেই। আমরা একই নেতৃত্বের অধীনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। কেউ বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইলে ভুল করবেন। আমরা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না।”
আরিফের এমন বক্তব্যে তাৎক্ষণিক সায় দেন উপস্থিত নেতাকর্মীরা। মঞ্চে তখন উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী, নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদীসহ আরও অনেক সিনিয়র নেতা।
দলীয় সূত্র জানায়, কোর্ট পয়েন্টে আয়োজিত জেলা ও নগর বিএনপির এক কর্মসূচির শেষাংশে এই বক্তব্য দেন আরিফুল হক। তার এমন হুঁশিয়ারি মূলত দলের অভ্যন্তরে সাম্প্রতিক কিছু বিভাজনের চেষ্টা, বিশেষ করে আরিফ-মুক্তাদিরকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর অপচেষ্টার জবাব হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিএনপির একাধিক নেতা জানান, উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যাতে দলের ভিতরে বিভেদ দেখানো যায়।
অথচ বাস্তবতা ভিন্ন। দুই শীর্ষ নেতা—আরিফুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির—দীর্ঘদিন ধরেই একসঙ্গে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। স্থানীয় রাজনীতিতে তাদের নেতৃত্বকেই বিএনপি কর্মীরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। বর্তমানে এই দুইজনকেই সিলেট বিএনপির ‘অভিভাবক’ হিসেবে দেখা হয়।
খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, যিনি সিলেট-১ আসনের সাবেক এমপি খন্দকার আব্দুল মালিকের পুত্র, ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে মাত্র দু’ঘণ্টার মধ্যেই লক্ষাধিক ভোট পান। সেই ভোটে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে তিনি জনসমক্ষে সিলেটবাসীর কাছে বিচার দেন। এরপর থেকে সরব থাকলেও দৃশ্যত অনেকটা প্রথাগত রাজনীতি থেকে সরে গিয়েছিলেন। তবে তার প্রভাব আজও অটুট।
অন্যদিকে ‘ম্যাজিকম্যান’ খ্যাত আরিফুল হক চৌধুরী দুই দফা মেয়র নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিকূল সময়ে জনসমর্থন ধরে রেখেছেন। সর্বশেষ ২০২৩ সালের সিটি নির্বাচনে তিনি দলের সিদ্ধান্তে অংশ নেননি, তবে রাজনৈতিক মাঠে সক্রিয় থেকে এখন নতুন করে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জনতার অনুমতি চেয়ে তিনি মসজিদে নামাজ পড়ে মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন, তবে চূড়ান্ত প্রার্থীতা এখনো ঘোষণা দেননি।
এই দুই নেতার একত্রিত বার্তা সিলেট বিএনপিতে একটি সুসংহত ও ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বেরই প্রতিচ্ছবি। বিএনপির অভ্যন্তরে বিভক্তি নয়, বরং নেতৃত্বে ভারসাম্য ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে এগিয়ে চলার বার্তাই উঠে এসেছে কোর্ট পয়েন্টের সেই ভিডিওতে।