হাফিজুর রহমান পান্না, রাজশাহী: রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিধ্বস্ত হওয়া বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজশাহীর সপুরা শাহী কবরস্থানে তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। এর আগে বিকেল ৪টায় রাজশাহী জেলা মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর জানাজা। জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার প্রদান করা হয় এ তরুণ বীরকে।
তৌকিরের মরদেহ মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে ঢাকার তেজগাঁও বিমান ঘাঁটি থেকে রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছায়। সেখান থেকে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হয় নগরীর উপশহরের বাসায়। বাড়িতে পৌঁছানোর পর স্বজনদের আহাজারি, প্রতিবেশীদের কান্না আর বন্ধুদের স্মৃতিচারণে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশের বাতাস।
তৌকিরের চাচা মতিউর রহমান জানান, মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পর থেকেই রাজশাহীতে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। মরদেহ পৌঁছালে এলাকার মানুষ ভিড় করেন তাঁর বাসার সামনে। কেবল একজন পাইলট নয়, সাগর ছিল এই শহরের অহংকার।
তৌকিরের জন্ম চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে হলেও তাঁর পরিবার রাজশাহীতে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বসবাস করছে। নগরীর উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরের ২২৩ নম্বর বাড়িতে ভাড়া থাকেন তাঁরা। স্ত্রী ঢাকায় সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। বছর খানেক আগে এই দম্পতির বিবাহ হয়।
তৌকিরের মামা শওকত আলী জানান, শৈশব থেকেই পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ছিল সাগরের। পরিবারের ইচ্ছা ছিল সে সেনাবাহিনীর অফিসার হবে। কিন্তু নিজের স্বপ্নের সঙ্গে আপস না করে মেধা ও নিষ্ঠা দিয়ে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে। রাজশাহীর নিউ গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলে প্রাথমিক পড়ালেখা শেষে পাবনা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন সপ্তম শ্রেণিতে। সেখান থেকেই এইচএসসি পাস করে ২০১৬ সালে বিমান বাহিনীতে যোগ দেন।
তৌকির ইসলাম শুধু একটি নাম নয়, এক স্বপ্নের প্রতীক—যে স্বপ্ন একদিন উড়াল দিয়েছিল দেশের আকাশে। আজ সেই আকাশই যেন বোবা হয়ে আছে। রাজশাহী হারাল তার এক কৃতী সন্তানকে, যাঁর জীবনের গল্প হয়ে রইল অকাল বিদায়ের বেদনায় মোড়ানো।